একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল, প্রথম দিকেই তার শিকার হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল। সেই ভয়াল রাতে গণহত্যার শিকার মানুষদের স্মরণানুষ্ঠানে সোমবার রাতে জগন্নাথ হলে এসেছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ৷
রাত সোয়া আটটায় জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে অবস্থিত গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বালন ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল, দুই সহ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ, সীতেশ চন্দ্র বাছারসহ প্রশাসনের পদস্থ ব্যক্তিরাও ছিলেন৷
মা–বাবা, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে জগন্নাথ হলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছিলেন অর্ণব দে। পেশায় তিনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। থাকতেন জগন্নাথ হলে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে তাঁর বাবা ও দুই চাচা জগন্নাথ হলে ছিলেন। এ ছাড়া তাঁদের এক ভাগনে সুশীল চন্দ্র দে শহীদুল্লাহ হলে চাকরি করতেন। সেই রাতে তিনি জগন্নাথ হলে ছিলেন। তাঁকে ট্যাংক দিয়ে পিষে দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁরা শুনেছেন। তিনি জগন্নাথ হলের প্রথম শহীদ৷
অর্ণব দে বললেন, ‘২৫ মার্চের রাতে জগন্নাথ হলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পাকিস্তানিরা অনেককে গুলি করে হত্যা করেছিল। আমার বাবা ও দুই চাচা সেদিন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফুফাতো ভাই সুশীল চন্দ্র দে শহীদ হন। আমার চাচাদের একজন ১৯৯৯ এবং আরেকজন ২০০৪ সালে মারা গেছেন। তবে বাবা এখনো সেই রাতের বীভৎসতা অনুভব করেন। বাবা এখন বাসা থেকে তেমন বের হন না। কিন্তু এই দিনটাতে জগন্নাথ হলে আসতে চান। প্রতিবছরই ২৫ মার্চে আমরা জগন্নাথ হলে আসার চেষ্টা করি।’
শহীদ সুশীল চন্দ্র দের ছোট ভাই কানাই রঞ্জন দে এখন জগন্নাথ হলে চাকরি করেন বলে জানালেন অর্ণব দে। রাতে হলের গণসমাধির সামনে সিঁড়িতে প্রয়াত বড় ভাইয়ের ছবি রেখে মোমবাতি প্রজ্বালন করতে দেখা যায় কানাই রঞ্জনকেও। এ সময় তাঁর চোখে-মুখে ছিল ভাই হারানোর বেদনা৷
২৫ মার্চ উপলক্ষে জগন্নাথ হলে শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনের স্মৃতি চিরন্তনে মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে স্মরণানুষ্ঠানের সূচনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের পক্ষ থেকে ২৫ মার্চভিত্তিক একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।