অ্যামাজনের নামে চীনে বসে বাংলাদেশে প্রতারণা

ডিবি বলছে, তিন মাসে চীনে অন্তত ১০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। চীনের দুই নাগরিকসহ চারজন গ্রেপ্তার।

অ্যামাজন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

‘অনলাইনে দিনে ২০ মিনিট কাজ করে মাসে ১৮ হাজার টাকা আয় করুন।’ যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি অ্যামাজনের আদলে ওয়েবসাইট খুলে এমন চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসা একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি বলছে, অনলাইনে খণ্ডকালীন কাজ খোঁজা ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে টাকা নিত চক্রটি। চক্রের প্রধান ডেং শোয়াইমিং চীনের নাগরিক। তিনি সেখানে অবস্থান করেই বাংলাদেশে প্রতারণা করছিলেন। গত তিন মাসে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অবৈধ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চীনে পাচার করেছেন এই চক্রের সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চীনের দুই নাগরিক ও দুই বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি চক্র গড়ে তোলেন ডেং শোয়াইমিং। ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়াতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায় বাসা ভাড়া নেন প্রতারক চক্রের চার সদস্য। সেখানে বসেই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে আসছিলেন তাঁরা।

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, টেলিগ্রামে চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পড়ে বিপুল টাকা হারিয়েছেন কয়েক শ ব্যক্তি। এঁদের একজন মোহাম্মদ আবুল কালাম। সাবেক সরকারি এই কর্মকর্তা কৌতূহলবশত বিজ্ঞাপন দেখে প্রায় চার লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। গতকাল ঢাকার রমনা থানায় তাঁর করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে চীনের দুই নাগরিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

তদন্ত দেখা গেছে, ফাঁদে ফেলে টাকা নেওয়ার আধা ঘণ্টা পরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত এসব সিম থেকে টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে হুন্ডির মাধ্যমে এসব টাকা চীনে পাচার করা হয়েছে।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (দক্ষিণ) উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, গত দেড় মাসে এই চক্রের বিরুদ্ধে ৮–১০টি অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। এঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন চক্রের সদস্যরা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, চক্রের কাছ থেকে প্রায় তিন হাজার সিম উদ্ধার করা হয়েছে। এসব সিমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নিবন্ধন করে টাকা লেনদেন করতেন চক্রের সদস্যরা। তদন্ত দেখা গেছে, ফাঁদে ফেলে টাকা নেওয়ার আধা ঘণ্টা পরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত এসব সিম থেকে টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে হুন্ডির মাধ্যমে এসব টাকা চীনে পাচার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া সিমগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ ও গ্রেপ্তার হওয়া চক্রের সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গত তিন মাসে চক্রের সদস্যরা প্রায় ১০০ কোটি টাকা চীনে পাচার করেছেন।

প্রতারক চক্রের সদস্যরা অ্যামাজনের আদলে ডোমেইন কিনে ‘অ্যামাজননাইনটিনাইনডটকম’, ‘অ্যামাজননাইনটিফাইভসডটকম’ ও অ্যামাজনসডটকম’ ওয়েবসাইট খুলে নিয়োগ ও খণ্ডকালীন চাকরি করে টাকা উপার্জনের লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন। পাশাপাশি নগদ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলতেন।

বিজ্ঞাপনে দেওয়া লিংকে প্রবেশ করে চাকরি কিংবা টাকা বিনিয়োগ করতে চাইলে প্রাথমিকভাবে আগ্রহী ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিতেন চক্রের সদস্যরা। শুরুর পর চাকরিপ্রার্থী ও বিনিয়োগকারীর টাকা ফেরত দিয়ে বিশ্বস্ততা অর্জন করতেন। পরে বড় অঙ্কের টাকা দিলে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন চক্রের সদস্যরা।

ডিবি বলছে, চক্রের প্রধান ডেং শোয়াইমিংয়ের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রেপ্তার চীনের দুই নাগরিক ঝ্যাং পিং ও ঝ্যাং ইরউয়া বাংলাদেশে আসেন। গ্রেপ্তার আবির হোসেন ও সিয়াম চৌধুরীকে নিয়ে চক্র গড়ে তোলেন। বিজ্ঞাপন দেখে যাঁরা ফাঁদে পড়তেন, তাঁদের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করতেন চক্রের এই চার সদস্য।