সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনের (যাচাই) সময় চাকরিপ্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা না করার সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র হবে চাকরির মানদণ্ড।
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সফররাজ হোসেন। তিনি বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের এই পদ্ধতি ১৯২৮ সাল থেকে হয়ে আসছে। এই পদ্ধতির কারণে অনেক চাকরিপ্রার্থী বাদ পড়ে যান। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো প্রার্থী যাতে বাদ না পড়েন, সে সুপারিশ করা হবে।
দক্ষ ও নিরপেক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে গত ৩ অক্টোবর পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের প্রধান করা হয় সাবেক সচিব সফররাজ হোসেনকে। ৬ অক্টোবর থেকে কমিশন কাজ শুরু। কমিশনের সব সদস্য আজ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে সফররাজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি, যেগুলো স্বল্প সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য। একটি বিষয়ে আমরা সমঝোতায় এসেছি। বাংলাদেশে সরকারি, আধা সরকারি ও ব্যাংকে চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে এই পদ্ধতি চলে আসছে। ব্রিটিশ আইনের ম্যানুয়াল অনুযায়ী এখানে কয়েক ধরনের প্রশ্ন ও তদন্ত করা হয়। এতে অনেক সময় চাকরিপ্রার্থী বাদ পড়ে যায়।’
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান আরও বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় বেশ কিছু বিষয় দেখা হয়। চাকরিপ্রার্থী রাজনীতি করেন কি না, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত কি না, প্রার্থীর আত্মীয়স্বজন রাজনীতি করেন কি না, খালা–খালু–ফুফা রাজনীতি করেন কি না—এসব যুক্তি দেখিয়ে প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয় না। অনেক সময় চাকরিপ্রার্থী বাদ পড়ে যান। এটি (রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই) বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত সবাই এই বিষয়ে মোটামুটি একমত হয়েছেন।
সফররাজ বলেন, ‘আমাদের সুপারিশ থাকবে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র দেখা হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র হবে চাকরির মানদণ্ড।’ পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকবে। তবে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় নেওয়া যাবে না, তাঁরা এমন সুপারিশ করবেন।
‘হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে পুলিশ গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিতে পারবে—এমন সুপারিশ করা হবে। তবে সুপারিশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সরকার সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। ৫৪ ধারা সংশোধনেরও সুপারিশ করা হবে’—বলেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান।
কাউকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সফররাজ হোসেন বলেন, যে কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে। তবে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে পুলিশকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ থাকবে কি না, জানতে চাইলে সফররাজ হোসেন আরও বলেন, দুর্নীতি ১ নম্বর শত্রু। সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও দুর্নীতি হয়। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রতিবেদনে সুপারিশ থাকবে।
পুলিশকে রাজনৈতিক দলের হয়ে ব্যবহার না করার বিষয়ে কী সুপারিশ করছেন জানতে চাইলে সাবেক এই সচিব বলেন, এ নিয়ে আলোচনা চলছে।