যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি নিয়ে তদন্ত করছে দেশটির সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি)। গত ১২ মার্চ এ নিয়ে শুনানি হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে ইউএসআইটিসির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছে। দুই দিনে প্রতিনিধিদলটি বাণিজ্য, শ্রম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো সোমবার প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানির শীর্ষে থাকা বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রতিযোগিতার সামর্থ্য নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইউএসআইটিসি। এ নিয়ে ওয়াশিংটনে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে তদন্ত শুরু করছে তারা।
বাংলাদেশসহ ওই পাঁচ দেশের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করার মতো সক্ষমতা কতটা রয়েছে, তা নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে খতিয়ে দেখছে মার্কিন এই সংস্থা। আগামী ৩০ আগস্ট কমিশন তাদের তদন্ত প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কাছে উপস্থাপন করবে। বাংলাদেশ ছাড়া বাকি দেশগুলো হলো ভারত, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান।
জানা গেছে, ইউএসআইটিসির অর্থনীতিবিদ এরিকা ব্যাথম্যান ও সংস্থার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক ম্যারি রুপ গত রোববার ও গতকাল বাণিজ্য, শ্রম, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। এ ছাড়া এই দিন তাদের একটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা।
জানতে চাইলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, নিয়মিত তথ্যানুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইউএসআইটিসির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছে। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিনিধিদলটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতার সামর্থ্যের বিষয়ে তদন্তের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যান ও গুণগত তথ্য সংগ্রহ করবে প্রতিনিধিদল।
তদন্তে মার্কিন দল কী খুঁজছে জানতে চাইলে একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য বিষয় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। যদি শ্রমিককে কম মজুরি দেওয়া হয়, তাহলে এটাতে বলার সুযোগ রয়েছে যে, এটি প্রতিযোগিতাবিরোধী কার্যক্রম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জানিয়েছে, দেশের বাস্তবতা ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয়। তদন্তের আওতায় মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিকদের কল্যাণ, নিরাপত্তাসহ অনেক ইস্যু রয়েছে। এগুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অগ্রগতি রয়েছে। বিষয়গুলো এরই মধ্যে তাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আর বাকি যে বিষয়গুলো রয়েছে, তা জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যে পথনকশা রয়েছে, সেই অনুযায়ী বাস্তবায়নে ঢাকা অঙ্গীকারবদ্ধ।
মার্কিন এ তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এ তদন্তের ভিত্তিতে কোথাও কোনো দুর্বলতা থাকলে তার জন্য সুপারিশ আসতে পারে।
আর এ ধরনের গঠনমূলক সুপারিশ এলে বাংলাদেশ তা আমলে নেবে। এ ছাড়া নিজ দেশের ক্রেতাদের জন্য কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারে ইউএসআইটিসি। তবে মাত্র তদন্ত শুরু করেছে, আগামী ৩০ আগস্ট কমিশন তাদের তদন্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করবে। সুতরাং কী ফল আসবে, তার জন্য অপেক্ষা করাটাই সমীচীন।
জানা গেছে, ইউএসটিআরের অনুরোধে বাংলাদেশ, ভারত, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান—এই পাঁচ দেশ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইউএসআইটিসি। কীভাবে এ দেশগুলো মার্কিন পোশাকশিল্পের বাজারে এত বড় অংশ দখল করে রেখেছে, তা তথ্যানুসন্ধান করে দেখবে কমিশন। এই পাঁচ দেশের কেউ অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজার দখল করছে কি না, তা খুঁজে বের করাই প্রধান উদ্দেশ্য এই কমিশনের।
জানা গেছে, তদন্তে শ্রম পরিবেশ ও পরিস্থিতির সার্বিক বিষয়গুলো দেখবে কমিশন।
সেখানে নিয়ম মেনে ভবন করা হয়েছে কি না, শ্রমিকের কর্মপরিবেশ, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের চর্চা, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, শ্রমিকের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হচ্ছে—এ ধরনের বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।