ডেঙ্গু

এক বিছানায় চলছে ভাইবোনের চিকিৎসা

হাসপাতালের বিছানায় জাকিয়া সুলতানা ও তাঁর ভাই ফাহিমুল হক। চট্টগ্রাম, ২৬ জুলাই
ছবি: সৌরভ দাশ

বিছানার মাঝামাঝি একটা বালিশ। এক বালিশে মাথা রেখে দুই শিশু উল্টো দিক হয়ে শুয়ে আছে। বড়টির (৬) শরীর খারাপ করা নিষ্পলক দৃষ্টি। ছোট শিশুটির পায়ের দিকে বসে আছেন মা ফাতেমা তুজ জোহরা। অস্থির হয়ে গেলে ১১ মাসের শিশুটিকে কোলে তুলে নিচ্ছেন কিছুক্ষণ পর পর। তাঁর চোখেমুখে রাজ্যের দুশ্চিন্তা।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই ভাইবোনকে এভাবেই দেখা গেল। মেয়েটির নাম জাকিয়া সুলতানা। তবে তন্বী নামেই চেনে সবাই। পড়ে রেলওয়ে পাবলিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে। তাঁর ভাইটির নাম ফাহিমুল হক। ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করার এক দিন পরে জাকিয়ার ডেঙ্গু ধরা পড়ে।

দুই সন্তান ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ফাতেমা তুজ জোহরা ও স্বামী মো. জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘গত সোমবার ফাহিমকে প্রথমে মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করি। এর আগে গত শুক্রবার তাঁর জ্বর আসে। পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে আসি। ঘরে কেউ না থাকায় বড় মেয়ে জাকিয়াকেও হাসপাতালে নিয়ে আসি। সে তখনো সুস্থ ছিল।’

জাহাঙ্গীরের বাড়ি মানিকগঞ্জে। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতালে ওয়ার্ড অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কর্মরত। ১০ বছর ধরে চট্টগ্রামে রয়েছেন। থাকেন এনায়েতবাজার রেলওয়ে কলোনিতে। ফাতেমা তুজ জোহরা গৃহিণী।

ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘এখানে আমাদের আত্মীয়স্বজনও নেই। বড় মেয়েকে ঘরে কার কাছে রেখে আসব। তাই সবাই হাসপাতালে চলে আসি। এখানে আসার পর তারও জ্বর আসে। এরপর ডেঙ্গু পজিটিভ আসে আজ। এখন জাকিয়ারও চিকিৎসা চলছে একই শয্যায়।’

চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে বুধবার মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ৮৪ জন। এর মধ্যে ৪৬ জনই শিশু। হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মিশু তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। ৪৬ শিশুর মধ্যে তিনজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছে। এর আগে এক দিনে সর্বোচ্চ ৮ শিশু আইসিইউতে ভর্তি ছিল।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে আজ বুধবার সকাল আটটা) চট্টগ্রামে নতুন করে ১১১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় একটি শিশু মারা গেছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২ হাজার ৩৫২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৭৩ জন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ২৪ জন মারা গেলেন। এর মধ্যে ১৩ জন শিশু।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ৩৪১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৩ হাজার ৬৭৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৬ হাজার ৬৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যান গত বছর—২৮১ জন। এর আগে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। এ ছাড়া ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে মারা যান ১০৫ জন।