পাঁচ বছর আগে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় তাসলিমা বেগম ওরফে রেনুকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন আট আসামি।
ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলম আজ বুধবার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবুল কাশেম।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তির নাম হৃদয় ইসলাম মোল্লা ওরফে ইব্রাহীম ওরফে নয়ন মোল্যা। তিনি আগে থেকেই কারাগারে আছেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আজ তাঁকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া চারজন হলেন আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, রিয়া বেগম ও আসাদুল ইসলাম। এই চারজন জামিনে ছিলেন। আজ রায় ঘোষণার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
খালাস পাওয়া আটজন হলেন সোহেল রানা, মহিউদ্দিন, শাহিন, বাচ্চু মিয়া, শহিদুল ইসলাম, মুরাদ মিয়া, বিল্লাল মোল্লা ও মো. রাজু।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই বাড্ডায় স্কুল প্রাঙ্গণে ‘ছেলেধরা’ গুজবে তাসলিমা বেগমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। হৃদয় ইসলাম মামলার প্রধান আসামি।
মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন হৃদয় ইসলাম, রিয়া বেগমসহ তিনজন। তাঁদের জবানবন্দিতে উঠে আসে, আসামি রিয়া বেগম সেদিন উসকানি দিয়েছিলেন। হৃদয় ইসলাম স্কুলের পাশে সবজি বিক্রি করতেন। তিনিই তাসলিমাকে প্রথমে লাঠিপেটা করেন।
মামলার নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাসলিমা তাঁর চার বছরের মেয়েকে ভর্তি করানোর বিষয়ে খোঁজ নিতে যান। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাঁকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহ করেন। এই গুজব দ্রুত বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশ থেকে বিভিন্ন বয়সী কয়েক শ নারী-পুরুষ স্কুল প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। তাঁদের মারধর থেকে রক্ষা করতে তাসলিমাকে স্কুলের দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন বিদ্যালয়ের কলাপসিবল গেট ভেঙে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যান। তাঁরা তাসলিমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে পেটাতে শুরু করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা নির্যাতনের পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তাসলিমা। ঘটনার পর তাসলিমার ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচ শ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন।
নিহত তাসলিমা ইডেন কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছিলেন। পরে তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেন। বিয়ের পর তিনি দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।