ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপকের বিচার চেয়ে আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১২ ফেব্রুয়ারি
ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপকের বিচার চেয়ে আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১২ ফেব্রুয়ারি

ঢাবির গণযোগাযোগের অধ্যাপককে তিন মাসের ছুটিতে পাঠাল কর্তৃপক্ষ

ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপকের বিচার চেয়ে আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ওই শিক্ষককে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিকেলে অভিযুক্ত শিক্ষককে তিন মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিভাগের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার জন্য ওই শিক্ষককে ছুটিতে পাঠানোর কথা বিভাগকে এক চিঠিতে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার বিভাগেরই এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। গতকাল বিভাগটির সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে দিনভর বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন আজ বেলা ১১টা থেকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের নবম তলায় সাংবাদিকতা বিভাগের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে তাঁরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিভাগীয় কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেন। দুপুর দেড়টার দিকে বিভাগের শ্রেণিকক্ষগুলোও সিলগালা করে দেন তাঁরা। বেলা দুইটার দিকে নবম তলা থেকে মিছিল নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামেন শিক্ষার্থীরা৷ মিছিলটি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, মধুর ক্যানটিন ও মল চত্বর হয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যায়। মিছিল থেকে ‘শিক্ষা নিপীড়ন, একসাথে চলে না’, ‘যে শিক্ষক নিপীড়ক, সেই শিক্ষক মানি না’, ‘সানগ্লাসের আড়ালে, শিক্ষকতা হারালে’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা যখন উপাচার্য কার্যালয়ে যান, তখন তিনি কার্যালয়ে ছিলেন না। সেই সময় উপাচার্যের বাসভবনে তাঁর সঙ্গে বিদেশি একটি প্রতিনিধিদলের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ছিল। উপাচার্যকে না পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে তাঁর বাসভবনের সামনে যান সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷ সেখানে অবস্থান করে তাঁরা কিছুক্ষণ স্লোগান দেন। একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান আবুল মনসুর আহাম্মদসহ তিন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী প্রক্টরও সেখানে ছিলেন।

বিভাগের চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তোমাদের দাবির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ বিকেল চারটার মধ্যে সেই সিদ্ধান্তের চিঠি বিভাগে আসবে। উপাচার্যের বাসায় বিদেশি একটি প্রতিনিধিদল রয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানের বিষয়।’ বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিভাগে গিয়ে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ করেন চেয়ারম্যান। তাতে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে বিভাগে চলে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পাঠানো চিঠি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পৌঁছায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। নিজের কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের তা পড়ে শোনান বিভাগের চেয়ারম্যান আবুল মনসুর আহাম্মদ৷ চিঠিতে বলা হয়, ‘বিভাগের শিক্ষার্থীদের গতকাল রোববারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে আপনাকে সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য আজ থেকে তিন মাসের জন্য ছুটি দেওয়া হলো৷ আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান ও তদন্ত করার জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’