সন্তানদের নিয়ে স্বামী মোহাম্মদ হানিফের মরদেহ নিতে এসেছেন আফিয়া খাতুন। স্বামীর কফিনবন্দী মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আজ সোমবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে
সন্তানদের নিয়ে স্বামী মোহাম্মদ হানিফের মরদেহ নিতে এসেছেন আফিয়া খাতুন। স্বামীর কফিনবন্দী মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আজ সোমবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে

পাঁচ মাস পর সৌদি থেকে ফিরল স্বামীর লাশ, অপেক্ষা শেষ হলো আফিয়ার

আফিয়া খাতুনের স্বামী মোহাম্মদ হানিফ সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় মারা যান। ‘মৃত স্বামীর মুখ শেষবার দেখবেন’-এ আশায় ছিলেন আফিয়া। দিন যায়, মাস যায় কিন্তু তাঁর এ অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। পাঁচ মাস পর অবশেষে আজ সোমবার স্বামীর লাশ বুঝে পেয়েছেন তিনি।

মোহাম্মদ হানিফ গত ১৬ জুন সৌদি আরবে মারা যান। গতকাল রোববার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে হানিফের লাশ দেশে আনা হয়। স্বামীর লাশ দেশে আসছে—এ খবর আফিয়া জানতে পারেন গত শনিবার সন্ধ্যায়। আজ সোমবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লাশ বুঝে পান। কফিনে মোড়ানো লাশ নিয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ নোয়াখালীর দিকে রওনা দেন আফিয়া ও তাঁর স্বজনেরা।

আফিয়া খাতুনের এখন একটাই সান্ত্বনা—‘স্বামীর মুখটা শেষবারের মতো হলেও দেখতে’ পেলেন তিনি। আজ বিকেলে মুঠোফোনে আফিয়ার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। আফিয়া বলেন, ‘অবশেষে স্বামীর লাশ পেলাম।’ বাবার লাশ দেখে মেয়ে এবং ১১ ও ৮ বছরের দুই ছেলের কান্না থামছে না বলে জানান আফিয়া। আরও বলেন, নির্যাতনে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয় বলে জানতে পেরেছেন তিনি।

সৌদি আরবে মারা যাওয়ার দীর্ঘ দিন পরও হানিফের লাশ দেশে না আসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ২৫ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘বিদেশে মারা যাওয়া স্বামীর মুখ দেখতে চান আফিয়া-সুমিরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আফিয়া জানান, সৌদি আরবে স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিলেন। ব্র্যাকের তথ্য বলছে, ১৬ জুন সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ হানিফ। দেশে থাকতে হানিফ রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তবে সৌদি আরবে যাওয়ার পর রাজমিস্ত্রির কাজ না দিয়ে তাঁকে আভা শহরে ভেড়া চরানোর কাজ দেওয়া হয়। নিয়োগকর্তা তাঁকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন বলেও অভিযোগ আছে।

স্বামীর লাশ দেশে ফেরত আনার জন্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে ৬ জুলাই আবেদন করেন আফিয়া। এরপর ১১ জুলাই বোর্ডের পক্ষ থেকে হানিফের মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কাউন্সেলর (শ্রম) বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে নিয়োগকর্তার খরচে জরুরি ভিত্তিতে হানিফের মরদেহ দেশে পাঠাতে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি মৃত কর্মীর বকেয়া বেতন-ভাতা, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও বিমা বাবদ পরিবার কোনো সহায়তা পাবে কি না, সেটাও জানাতে বলা হয়।

শিশুসন্তান কোলে বিমানবন্দরে আফিয়া খাতুন

আফিয়া জানান, স্বামী মোহাম্মদ হানিফের লাশ দেশে আনার ক্ষেত্রে তাঁকে কোনো অর্থ খরচ করতে হয়নি। তবে গ্রাম থেকে ঢাকায় লাশ নিতে আসা ও লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরা বাবদ খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই খরচ মেটাতে হয়েছে।

দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীকল্যাণ বোর্ডের ডেস্ক আছে। এসব ডেস্ক থেকে মরদেহ আনা ও দাফন বাবদ মৃত কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের ৩৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। এ ছাড়া পরিবারপ্রতি তিন লাখ টাকা আর্থিক অনুদানও দেয় প্রবাসীকল্যাণ বোর্ড। আফিয়া জানান, চেকটি তিনি পেয়েছেন। তিন লাখ টাকা পেতে কোথায় ও কীভাবে আবেদন করতে হবে, তা–ও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২০১১ সালে বিয়ে হয় হানিফ ও আফিয়ার। হানিফ সৌদি আরবে যান গত বছরের মার্চে। যাওয়ার আগে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। আফিয়া বলেন, তিনি ভেবেছিলেন যে স্বামী বিদেশে কাজ করতে গেলে সংসারের অভাব–অনটন ঘুচবে। তবে স্বামী ফিরলেন লাশ হয়ে। এখন কীভাবে সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাবেন, জানতে চাইলে আফিয়া বলেন, ‘কী করি চলবে, তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।’