কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় কয়েক দফা ইন্টারনেট বন্ধের বিস্তারিত কারণ জানিয়েছে বিটিআরসি। এতে বলা হয়েছে, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে এবং গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে তিনি এসব নির্দেশ দিতেন।
জাতিসংঘের তিনজন বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চান। ৪ আগস্ট এ বিষয়ে তথ্য দিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। গত মঙ্গলবার সেই চিঠির জবাব দিয়েছে বিটিআরসি।
বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই লিখিত জবাবে বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী (জুনাইদ আহ্মেদ) ইন্টারনেট বন্ধ বা সীমিত করা এবং তা পুনরায় চালুর বিষয়ে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর সব নির্দেশনাই মৌখিক ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (এনএসআই) মতো গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে এসব নির্দেশ দিতেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৮ জুলাই সারা দেশে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন জুনাইদ আহ্মেদ। তিনি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেফারেন্স উল্লেখ করে জানিয়েছিলেন, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ কমিয়ে আনতে এ নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ ৫ আগস্ট মুঠোফোন বার্তায় ওই দিন সকাল ১০টায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে কোনো দিন কীভাবে ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছিল সেটিও উল্লেখ করা হয় বিটিআরসির চিঠিতে।
গত মঙ্গলবার প্রথম আলোতে এ বিষয়ে ‘ইন্টারনেট বন্ধ করেছিল বিটিআরসি ও এনটিএমসি, ফোন করেছিলেন পলকও’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বিটিআরসির চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিগত সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে তারা সাবেক প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া ইন্টারনেট বন্ধের আইনগত ভিত্তি হিসেবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৯৭ ধারার কথা উল্লেখ করে বিটিআরসি। তারা জানায়, ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন এবং দায়ভার নিয়েছেন যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩ আগস্ট নাটোরের সিংড়ায় এক আলোচনা সভায় জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের কাছে যদি আমার কোনো ভুল হয়ে থাকে, আমি প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ইন্টারনেট ব্যাহত হওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার দায় আমি নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছি। যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। ’
ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গত রোববার ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। ওই প্রতিবেদনেও সাবেক প্রতিমন্ত্রী, বিটিআরসি ও এনটিএমসি ইন্টারনেট বন্ধে জড়িত বলে জানানো হয়। এ ছাড়া বলা হয়, ডেটা সেন্টারের ঘটনা প্রচার করে জাতির সঙ্গে মিথ্যাচার করেছেন জুনাইদ আহ্মেদ।
এদিকে বুধবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি সাত মাস ধরে এ পদে ছিলেন।