কক্সবাজার রেলপথ

ঢাকা থেকে আরেকটি বিরতিহীন ট্রেন, অপেক্ষায় চট্টগ্রাম

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে ঢাকা থেকে আসা ট্রেন থামার পর নামছেন যাত্রীরা
ফাইল ছবি

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আরও একটি বিরতিহীন যাত্রীবাহী আন্তনগর ট্রেন চালু হতে যাচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে এই ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে এই মুহূর্তে ট্রেন দিচ্ছে না রেলওয়ে। অথচ রেলওয়ে শুরুতে জানিয়েছিল, ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকেও একটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে।

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চলাচলের বিষয়ে একটি প্রস্তাব আজ বুধবার রেল ভবনে পাঠিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন ট্রেন চালুর সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১ জানুয়ারি। প্রস্তাবে এই ট্রেন কখন কোথা থেকে ছাড়বে, কখন গন্তব্যে পৌঁছাবে, তার সময় দেওয়া হয়েছে।  

কক্সবাজার রেললাইন চালুর পরও চট্টগ্রাম থেকে নতুন ট্রেন না দেওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালুর দাবি উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইনের উদ্বোধন করেন। এরপর ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন ট্রেনের চাহিদা থাকলেও ইঞ্জিন, কোচ, লোকোমাস্টারসহ (ট্রেনচালক) জনবলসংকটের কারণে তা চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি রেলওয়ের কর্মকর্তাদের। কিন্তু এই অবস্থায় ঢাকা থেকে আরও একটি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। তাঁদের দাবি, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেনের আসন নিয়ে যাত্রীদের ব্যাপক আগ্রহের কথা চিন্তা করে নতুন আরেকটি ট্রেন চালু হচ্ছে।

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। তিনি বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের বেড়ানোর অন্যতম পছন্দের জায়গা কক্সবাজার। এই রুটে রেললাইন চালু হওয়ায় সারা দেশের মানুষের ট্রেনে করে পর্যটন শহরে যাওয়া নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এই আগ্রহের কথা বিবেচনা করে ঢাকা থেকে আরও একটি ট্রেন চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা দেশের রাজধানী। ঢাকা থেকে সহজেই মানুষ নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেন। এ জন্য ঢাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকেও একটি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। তবে কবে নাগাদ এই ট্রেন চলাচল করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, নতুন ট্রেনে ১৬টি বগি থাকবে। আসন থাকবে ৭৮০টি। কক্সবাজার এক্সপ্রেসের মতো এই ট্রেনে চট্টগ্রাম স্টেশনের জন্য ১১৫টি আসন বরাদ্দ থাকবে। নতুন এই ট্রেনের নাম চূড়ান্ত করা হয়নি। সম্ভাব্য নাম হচ্ছে পালংকি এক্সপ্রেস, তরঙ্গ এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেস।

এই ট্রেন প্রতিদিন সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়বে। এই ট্রেন ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি দেবে। এরপর সরাসরি চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে। ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়ে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশন ত্যাগ করবে। কক্সবাজারে পৌঁছাবে বেলা ৩টায়; অর্থাৎ পৌনে ৯ ঘণ্টা সময় লাগবে।

একই ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার ছাড়বে রাত ৮টায়। চট্টগ্রামে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে। আর ঢাকায় পৌঁছাবে ভোর সাড়ে ৪টায়। এই ট্রেন ঢাকা বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে। সাপ্তাহিক বন্ধ হচ্ছে রোববার।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার এক্সপ্রেসের মতো নতুন ট্রেনেও চট্টগ্রামের জন্য আসন বরাদ্দ থাকবে। তবে ইঞ্জিন ও জনবলসংকটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে এই মুহূর্তে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। তবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে এই ট্রেন চলাচল করতে পারে।

এদিকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ লোকমান হাকিম চন্দনাইশের দোহাজারীতে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি রেলমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন দেওয়ার দাবিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন লোকজন।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি ও প্রবীণ অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ সিকান্দার খান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা থেকে প্রচুর চাপ থাকবে। তাই ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি ঠিক আছে। তবে চট্টগ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ সড়কপথে কক্সবাজারে যাতায়াত করে। সড়কপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে। এগুলো বিবেচনা করে চট্টগ্রাম থেকে যেন নতুন ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেলওয়ে।