রাজধানীর পলাশীর মোড়ে ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমীর মিছিল শুরুর আগে এক সমাবেশ হয়
রাজধানীর পলাশীর মোড়ে ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমীর মিছিল শুরুর আগে এক সমাবেশ হয়

ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না

দেশের যেকোনো জনগোষ্ঠী অনিরাপদ থাকলে গোটা বাংলাদেশ অনিরাপদ থাকে। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য দেশে মেনে নেওয়া হবে না। এমন একটি দেশ গঠন করতে হবে, যেখানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর পলাশীর মোড়ে ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমীর মিছিল শুরুর আগে এক সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও মো. নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।

এই আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা অভিযোগ শুনি এক আমলে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বৈষম্যের শিকার হয়, আরেক আমলে দাড়ি-টুপি পরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হয়। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। সবার সমান অধিকার থাকবে। এই রাষ্ট্রের মালিকানা সবার থাকবে। আমরা একটি পরিবারের মতো থাকব। আমরা যে যার ধর্ম পালন করব, অন্য ধর্মকে আমরা সমানভাবে শ্রদ্ধা করব। অন্য ধর্মের জন্য সমান স্পেস তৈরি করব।’

স্বাধীনতাযুদ্ধ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হিন্দুরাও সমানভাবে অংশ নিয়েছে, আত্মদান করেছে বলেও উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ী ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা ব্যক্তিদের পরাজিত করে দেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে হবে। তিনি হিন্দুদের সংখ্যালঘু না ভাবার অনুরোধ জানান। হিন্দুদের কোনো দলের রাজনৈতিক খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।

জন্মাষ্টমীর মিছিলের উদ্বোধন করেন তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশের যেকোনো জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যদি অনিরাপদ থাকে, তাহলে গোটা বাংলাদেশ অনিরাপদ থাকে। আমরা মনে করি, ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র, সরকার ও সকল জনগণের। বাংলাদেশকে এক থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাইরের কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।’

বিকেল চারটার দিকে জন্মাষ্টমী মিছিল পলাশী থেকে বাহাদুরশাহ পার্কের উদ্দেশে রওনা হয়।

গত ৫৩ বছরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে; কিন্তু সেগুলোর বিচার হয়নি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, কারণ যারা বিচার করবে, তারা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। রাজনৈতিক ইন্ধনে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছিল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বারবার রাজনৈতিক টুল (হাতিয়ার) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হয়; কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, যদি সব জনগোষ্ঠীর মানুষকে অন্তর্ভুক্তি না করা যায়, তাহলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ব্যর্থ হবে। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্যের বাংলাদেশ মেনে নেওয়া হবে না।

শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী মিছিলে বন্যার্ত মানুষের জন্য অর্থসহায়তা সংগ্রহ করা হয়

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, আমরা ইতিমধ্যে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানের অনেকখানি বাদ দিয়ে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এই আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।

সভা শেষে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন করে জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করেন তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। বিকেল চারটার দিকে জন্মাষ্টমী মিছিল পলাশী থেকে বাহাদুরশাহ পার্কের উদ্দেশে রওনা হয়।