বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচকেরা। টিআইবি, মাইডাস সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচকেরা। টিআইবি, মাইডাস সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা

আলোচনায় বক্তারা

দেশে গণমাধ্যমের কাজের সুযোগ সংকুচিত করা হচ্ছে

দেশের গণমাধ্যম বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের কাজের সুযোগ সংকুচিত করা হচ্ছে। আইনের অপব্যবহারের সুযোগ থাকায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার রাজনীতিকরণ হওয়ায় দুর্বল হয়েছে জবাবদিহি নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আলোচনায় উঠে এসেছে এসব মতামত। তবে এসব বিষয়ে অনেকটাই ভিন্নমত পোষণ করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

আগামীকাল শুক্রবার (৩ মে) সারা বিশ্বে পালিত হবে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ বা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষিতে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকোর ঢাকা অফিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও আর্টিকেল নাইনটিন।

অনুষ্ঠানে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘দেশের গণমাধ্যম শুধু মুক্ত না, পুরো উন্মুক্ত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব বা নজরদারির ইচ্ছা সরকারের নেই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পাশাপাশি তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ যেন অপতথ্য না ছড়ায়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’

দেশের গণমাধ্যম শুধু মুক্ত না, পুরো উন্মুক্ত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব বা নজরদারির ইচ্ছা সরকারের নেই।
মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

উন্নয়নের নামে আগ্রাসীভাবে ভূমি, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ দখল করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, যাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দায়িত্ব, তাদের একাংশ এ প্রক্রিয়া থেকে লাভবান হয়। ২০২২-২৩ সালে পরিবেশ নিয়ে লেখালেখি করায় ৪৩ জন সাংবাদিককে হামলা-নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরিবেশকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে।

গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের কাজের সুযোগ সংকুচিত করা হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বেশ কিছু আইনেই আইনের অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।

তবে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার হলে অপতথ্য ছড়ায়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। জনগণের বৃহৎ স্বার্থে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা জরুরি। কিন্তু সেটির অপব্যবহার যেন না হয়। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো ইচ্ছা ছিল না, ভবিষ্যতেও নেই।

আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, বালুমহাল, নদী দখল, পাহাড় কাটার মতো পরিবেশ ধ্বংসের কাজে ক্ষমতাধর মহল জড়িত থাকে। পুলিশ, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর সবার সামনে এসব হয়। উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের পক্ষে এসব বিষয়ে হাত দেওয়া কঠিন।

সমালোচনাকে সরকার স্বাগত জানায় উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, সমালোচনা হতে হবে তথ্যনির্ভর, উপাত্তভিত্তিক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যেন মিথ্যা তথ্য না ছড়ানো হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক বলেন, বালুমহাল, নদী দখল, পাহাড় কাটার মতো পরিবেশ ধ্বংসের কাজে ক্ষমতাধর মহল জড়িত থাকে। পুলিশ, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর—সবার সামনে এসব হয়। উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের পক্ষে এসব বিষয়ে হাত দেওয়া কঠিন। সাংবাদিকদের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ থাকে না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউনেসকো ঢাকা অফিসের প্রধান সুজান ভাইজ, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান শামছুদ্দিন ইলিয়াছ ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক উসরাত ফাহমিদা। সঞ্চালনা করেন আর্টিকেল নাইনটিনের আঞ্চলিক পরিচালক (বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া) শেখ মনজুর-ই-আলম।

১৯৯১ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩ মে তারিখকে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দিবসটি সামনে এলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপদ পরিবেশের কথা সামনে আসে।