নিজের দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন কৃষিমন্ত্রী

আব্দুর রাজ্জাক
ফাইল ছবি

বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্বাচনে আনতে তাঁদের মুক্তিসহ নানা বিষয় নিয়ে নিজের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রয়োজনে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যে কথা বলেছিল, তা চিন্তা করেই বলা হয়েছিল বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অর্থ কী? বিএনপি যদি রাজি হয়, তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। তিনি সেই কথাটিই বলেছেন।

আজ সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকারের উদ্যোগের কথা বলেছিলেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, ‘বারবার বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে, তারা যদি নির্বাচনে আসে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে এবং পিছিয়ে দেওয়া নয়, বলা হয়েছিল তাদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

সাক্ষাৎকারে আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, ‘২০ হাজার (বিএনপি নেতা-কর্মী) গ্রেপ্তার না করলে আজকে এই যে গাড়ি চলতেছে হরতালে, আপনি কি রাস্তায় গাড়ি দেখতেন? এ ছাড়া আমাদের জন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না, কোনো অলটারনেটিভ ছিল না। যেটা করেছি, আমরা চিন্তাভাবনা করে করেছি।’
বিষয়টি নিয়ে আজ সচিবালয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় চেয়েছে সব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপি একটি বড় দল, এটি তারা সব সময় বলে। বিএনপিরও অংশগ্রহণ করা দরকার। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নানা ফন্দি করেছে।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে কি দেখা গেছে? তাঁর (মন্ত্রী) বক্তব্য হলো, আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবে চেয়েছে বিএনপি অংশগ্রহণ (নির্বাচনে) করুক। এ কথাটি বলতে গিয়ে তিনি সেদিন কিছু কথাবার্তা বলেছেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সেদিন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে এটিও বলেছি বিএনপি চায় নির্বাচনটি বানচাল হোক। তারেক জিয়ার নামে মামলা হয়েছে, শাস্তি হয়েছে, তাঁর মায়ের (বেগম খালেদা জিয়া) শাস্তি হয়েছে। আমার ধারণা, তাঁরা নির্বাচনে আসতে চায়নি।’

বিএনপি সব সময় নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনোক্রমেই নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ভারত, শ্রীলঙ্কা, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ পৃথিবীর কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হয় না। কাজেই আওয়ামী লীগের কাছে কোনো বিকল্প নেই। এই কথাটিই তিনি বলেছেন।

ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, গাজীপুরে রেললাইন কেটে দেওয়া এবং ২০১৩ ও ২০১৪ সালের সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, যদি এগুলো বন্ধ করতে হয়, তাহলে গ্রেপ্তার তো করতেই হবে।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি বহুবার বলেছি বিএনপি নেতাদের হুকুম ছাড়া কোনো কর্মী কি বাসে আগুন দেবে? কোনো কর্মী কি ঝুঁকি নেবে। তার কি ভয় নেই? জেল-জুলুমের ভয় আছে না?’ তিনি বলেন, যারা সন্ত্রাস করছে, সন্ত্রাসের হুকুম দিচ্ছে, সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করছে, লন্ডন থেকে যারা নির্দেশ দিচ্ছে, এই সন্ত্রাসের জন্য সরকার বাধ্য হয়েছে গ্রেপ্তার করতে।

সরকারের দায়িত্ব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া বলে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের (বিএনপি নেতা-কর্মী) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা যদি নির্বাচনে আসত, নির্বাচনে আসলে স্বীকার করে নিল, তখন সন্ত্রাস করার দরকার নেই। সহিংসতা-আগুন সন্ত্রাসের দরকার নেই। তখন এমনিতেই শান্তি হতো।’

প্রয়োজনে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ টেনে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন কমিশনে আইনের অনেক লোক আছে। তারা তো চিন্তা করেই বলেছে। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অর্থ কী? বিএনপি যদি রাজি হয়, তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। সেই কথাটিই তিনি বলেছেন।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি নেতাদের তিনি ছেড়ে দেবেন, বিষয়টি তা নয়। জামিন দিয়ে, আনুষ্ঠানিকতা করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার বক্তব্যে আমি বারবার বলেছি, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আলাপ-আলোচনা করে অনেক কিছু করা যায়।’