কৃষিকাজে খণ্ডকালীন শ্রমিক হিসেবে প্রতিবছর কর্মী যান ইউরোপের দেশ ইতালিতে। তবে বিভিন্ন সময় নকল কাগজপত্র জমা দিয়ে অনেকের ভিসা আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এতে ভিসা প্রক্রিয়া আরও কঠিন করে ঢাকার ইতালি দূতাবাস। মাঝে বন্ধও ছিল কিছুদিন। এতে ভিসা পেতে অপেক্ষমাণ তালিকা দীর্ঘ হয়ে গেছে। ৬০ হাজারের বেশি কর্মী আছেন অপেক্ষায়, বেড়েছে ভোগান্তি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের ভোগান্তির কথা জানান ইতালি গমনেচ্ছু কর্মীরা। ভুক্তভোগীরা নিজেরা মিলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ভিসার আবেদন জমা দিতে তারিখ চেয়ে মেইল করার পরও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না তাঁরা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের আবেদন জমা নিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে ইতালি দূতাবাসে নিজেদের দাবির পক্ষে ভুক্তভোগীদের একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। ভুক্তভোগীদের সহায়তায় কাজ করছে বাংলাদেশের প্রবাসী উন্নয়ন সমিতি নামে একটি সংগঠন। তারাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল। সমিতির নির্বাহী পরিচালক শাহ মো. তাইফুর রহমান বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ২০ হাজার ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইতালি। এটি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি হতে পারে। বাস্তবে দূতাবাসের সেই সক্ষমতা নেই। তারা দিনে ১০০ আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করে। প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষমতা ১০ গুণ বাড়াতে হবে। তবে ভিসার আবেদন জমা দিয়ে অপেক্ষায় আছেন, এমন কোনো ভুক্তভোগী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহ মো. তাইফুর রহমান বলেন, ইতালির দূতাবাসে ৪০ হাজার ভিসা আবেদন জমা আছে। ২০ হাজারের বেশি কর্মী আবেদন জমা দিতে সময় চেয়ে মেইল করেছেন। এটি একটি আনুমানিক হিসাব। বাস্তবে এটি আরও বেশি বা কম হতে পারে। তাঁদের সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের সমস্যা সমাধানে, কাগজপত্র যাচাইয়ে তাঁরা ইতালির নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ পর্যন্ত ২৫০ জন নিয়োগকর্তার সঙ্গে তাঁরা মেইলে যোগাযোগ করেছেন, যাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ কোনো সাড়া দেননি।
ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. রিগানউদ্দিন। তিনি নিজেও আবেদন জমা দিতে মেইল করে সাত মাস ধরে অপেক্ষায় আছেন। নানাবিধ ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। লিখিত বক্তব্যে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, আবেদন জমা নেওয়ার বন্ধ থাকা অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রক্রিয়া দ্রুত চালু করে ধারাবাহিকভাবে দেওয়া শুরু করতে হবে। না হলে কঠোর কর্মসূচি দেবেন তাঁরা। মেইল করার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ এবং পরবর্তী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে ভিসা প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। দালালের হয়রানিও বন্ধ করার দাবি জানান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনের পর নারায়ণগঞ্জের বেকার যুবক সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিলের শুরুতে সময় চেয়ে মেইল করেছেন তিনি। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখে অন্য কোনো কাজেও যুক্ত হতে পারছেন না।