জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের বিরুদ্ধে করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে আত্মসাৎ এবং করোনার পরীক্ষা না করেই ভুয়া ও জাল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর আজ বুধবার দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ মামলাটি করেন।
মামলায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিও সার্জারি বিভাগের সাবেক রেজিস্ট্রার ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিনকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, ডা. সাবরিনার স্বামী জেকেজি হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুল চৌধুরী, জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্মচারী আ স ম সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির, তানজিনা পাটোয়ারী, জেকেজি হেলথ কেয়ারের স্বত্বাধিকারী জেবুন্নেসা রিমা।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি সাবরিনা শারমিন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অসৎ উদ্দেশ্য এবং কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে জেকেজি হেলথ কেয়ার নামে একটি লাভজনক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পরিচয় ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অন্যদের যোগসাজশে অভিজ্ঞতাহীন, নিবন্ধনবিহীন, ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ওভাল গ্রুপের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারকে কোভিড-১৯-এর নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁর স্বামী আরিফুল চৌধুরী।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, করোনা মহামারির সময় বুথ থেকে বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেকেজি হেলথ কেয়ারকে অনুমোদন দেয়। কিন্তু বুথ থেকে নমুনা সংগ্রহ না করে আসামি সাবরিনা শারমিন ও তাঁর স্বামী আরিফুল চৌধুরীর নির্দেশে জেকেজির কর্মচারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিটি পরীক্ষার জন্য পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা করে নেয়। তদুপরি যথাযথভাবে করোনার পরীক্ষা না করে আনুমানিক ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া ও জাল রিপোর্ট তৈরি করে তা সেবাগ্রহীতাদের সরবরাহ করে। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তারা অর্থ সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেন।
দুদক অনুসন্ধানে পেয়েছে, করোনা মহামারির সময় যখন সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি এবং লকডাউন চলছিল (১ এপ্রিল ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২০), তখন মাত্র তিন মাসে ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর ওভাল গ্রুপ এবং এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ভেলবিল সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার সাত টাকা জমা হয়, যা করোনার নমুনা পরীক্ষার টাকা বলে দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
মামলায় করোনার নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ছাড়াও ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে জন্মতারিখ পরিবর্তন করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দুটি ভিন্ন টিআইএন নম্বর খোলার অভিযোগ আনা হয়। তাতে বলা হয়, ডা. সাবরিনা শারমিন প্রকৃত জন্মতারিখ ১৯৭৮ সালকে ১৯৮৩ সাল বানিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ান।
মামলায় বলা হয়, আসামিরা সরকারি কর্মচারী হিসেবে কর্মরত থেকে বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। করোনা মহামারির সময়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভুয়া ও জাল রিপোর্ট দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
এর আগেও করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় ২০২২ সালের ১৯ জুলাই সাবরিনা, তাঁর স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৮ জনকে ১১ বছর করে কারাদণ্ড হয়। জালিয়াতির ঘটনায় কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় ওই মামলা করেন।