সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না: চরমোনাইয়ের পীর

সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (মাঝে)। রোববার ঢাকার পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের অধীন সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আবারও নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে।

আজ রোববার দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও জাতীয় সরকারের অধীন আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে দলের মহাসচিব ইউনূছ আহমাদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘রাতের ভোটে নির্বাচিত বর্তমান সংসদের কোনো নৈতিক বৈধতা নেই। এই অবৈধ সংসদ বহাল রেখে কোনো নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না। অতএব আমরা বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের অধীন সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চাই।’

‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা বদলের’ লক্ষ্যে চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ রেজাউল করিম ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে, জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে; বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন; জাতীয় সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবেন, কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন; বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না এবং জাতীয় সরকারে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে কারা থাকবেন, সে বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির জানান, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী ও সিভিল সোসাইটির (নাগরিক সমাজ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা জাতীয় সরকারের কাঠামো এবং এ সরকারে কারা থাকবেন, তা দ্রুত প্রকাশ করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে চরমোনাইয়ের পীর দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১৪ বছর দেশে কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও জনগণ তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। ক্ষমতাসীনেরা তাদের দলীয় লোকদের নির্বাচিত করার জন্য এমন কাজ নেই, যা করেনি। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন—কেউই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। মানুষ আর তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের ব্যর্থতা এবং সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের (উনি কী ইন্তেকাল করেছেন?) উল্লেখ করে তাঁর কঠোর সমালোচনা করেন সৈয়দ রেজাউল করিম। তিনি সিইসিকে ‘অবিবেচক’ ও ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ মানুষ বলে অভিহিত করেন।

চরমোনাইয়ের পীর সিইসির পদত্যাগ ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে ২১ জুন সকাল ১০টায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয় অভিমুখী গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ২৪ জুন বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে রাজনীতিক, সাংবাদিক, ওলামা মাশায়েখ, বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে বলে জানান তিনি।