বাংলাদেশে গত সপ্তাহে রাজনৈতিক প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলেছে, রাজনৈতিক সহিংসতার পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
গতকাল সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
গত শনিবার রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোয় অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অন্তত পাঁচটি জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এদিন ‘সতর্ক পাহারার’ নামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে কোনো কোনো জায়গায় সংঘর্ষে জড়ান। সংঘর্ষে বিভিন্ন পক্ষের অনেকে আহত হন। বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে একজন প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন লাখো মানুষ। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শনিবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বিক্ষোভকারী ও বিরোধী নেতাদের ওপর পুলিশ, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা নৃশংস হামলা চালিয়েছেন।
হামলায় শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ শত শত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরকারের দৃশ্যত কঠোর অবস্থান ও পুলিশি নিষ্ঠুরতার প্রেক্ষাপটে এই ক্রমাগত সংঘাতময় পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিশ্চিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কী পদক্ষেপ নেবে?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘সপ্তাহান্তের রাজনৈতিক প্রতিবাদকে ঘিরে বাংলাদেশে ভয় দেখানো ও সহিংসতার খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার ঘটনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে বলব। সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বলব। মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারেন, তাঁদের উদ্বেগের কথা বলতে পারেন, তার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে আমরা বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাই।’
মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার আরও বলেন, তিনি পরিশেষে বলবেন, ভোটার, রাজনৈতিক দল, দলের তরুণ শাখা, পুলিশসহ সবার প্রতিশ্রুতির ওপর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করে। রাজনৈতিক সহিংসতার পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
ব্রিফিংয়ে অপর একজন প্রশ্ন করেন, সবাই জানেন যে বাংলাদেশে একটি জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিশ্চিত করেছেন যে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল গত সপ্তাহে দেশটির রাজধানীতে অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও ভাঙচুর চালিয়েছে। তারা শুধু বেসরকারি সম্পত্তি নয়, পুলিশের সম্পত্তির ওপরও হামলা করছে। সেখানে তারা সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা রাজধানীতে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তারা নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে এসব করছে, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
জবাবে মিলার বলেন, আগের প্রশ্নের উত্তরে তিনি যে কথা বলেছেন, এ ক্ষেত্রেও তাঁর মন্তব্য একই।
দ্বিতীয় ব্যক্তি মিলারের কাছে আবার প্রশ্ন করেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকে একটি পর্যবেক্ষণ চাই। গত ১৫ জুন একটি বিচার বিভাগীয় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের শুনানিকালে কানাডার ফেডারেল বিচারক বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন। কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য বিএনপির এক কর্মীর আবেদন নাকচের বিরুদ্ধে এই বিচার বিভাগীয় রিভিউটি করা হয়েছিল। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিল তারা। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
জবাবে মিলার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো পর্যবেক্ষণ নেই।’