এই গাছ দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম কাসাভা আলুর গাছ। পাতার গড়ন প্রায় অভিন্ন বলেই এই ভ্রম। তবে ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখলে দুই গাছের পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে; যার প্রধান বিশেষত্ব ফুলে। গাছটি জেট্রফা নামে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে স্বীকৃত কোনো বাংলা নাম নেই। ইংরেজি নাম কোরাল বুশ বা ফ্রেঞ্চ ফিজিক নাট।
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ঔষধি বাগানে দেখা গাছটির সৌন্দর্য আলাদাভাবেই চোখে পড়ে। এ গাছের জন্মস্থান মেক্সিকো বা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ হলেও গাছটি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, চীন ও ভারতীয় উপমহাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন বাগানে শোভাবর্ধক হিসেবে রোপণ করা হয়।
জেট্রফা গণের এই দৃষ্টিনন্দন উদ্ভিদ (Jatropha multifida) মাঝারি আকৃতির গুল্ম বা ছোট ধরনের বৃক্ষও হতে পারে। সাধারণত ২ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গাছটি তরুক্ষীর যুক্ত ও রোমশবিহীন। পাতা করতলাকৃতির, গভীরভাবে খণ্ডিত, ১০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত, নিচের পিঠ সবুজ, ওপরের পিঠ ধূসর সবুজ, উভয় পিঠ রোমশবিহীন। উপপত্র দৃঢ়, বৃন্ত ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা, গোলাকৃতি ও অখণ্ড। পুষ্পবিন্যাস প্রান্তীয়, মঞ্জরিদণ্ডÐ১৩ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা। মঞ্জরিদণ্ডের আগায় লালচে রঙের ফুল দেখতে অনেকটা মুকুট বা অগ্নিশিখার মতো। পুষ্প ঘন সন্নিবিষ্ট, খাটো বৃন্তক। পুংফুলের বৃতি ২ থেকে ৩ মিলিমিটার লম্বা, বৃত্যংশ ৫টি, গোলাকার, মূলীয় অংশে সামান্য যুক্ত, লাল, পাপড়িসংখ্যা ৫ ও পুংকেশর ৮টি, পুংদণ্ডমূলীয় অংশে সামান্য যুক্ত, পরাগধানী বিদারী ও প্রসারিত। স্ত্রী ফুলের বৃতি পুংফুলের বৃতির মতোই, তবে বৃত্যংশ ৬ থেকে ৭ মিলিমিটার লম্বা, লাল, পাপড়ি পুংফুলের পাপড়ির মতো, গর্ভাশয় রোমশবিহীন। গর্ভদণ্ডÐ৩টি, নিচের অর্ধাংশে যুক্ত। পরিচ্ছন্ন পাতা আর ঊর্ধ্বমুখী ফুলের স্নিগ্ধতা গাছটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সাধারণত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ফুল ও ফলের মৌসুম।
এই গাছ বাহারি ও ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে বিভিন্ন দেশে চাষাবাদ করা হয়। গাছটির ফল, মূল ও বীজ নানান রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার্য। ফল কটু স্বাদযুক্ত, প্লীহা বৃদ্ধি রোগে, অর্শ ও ক্ষত নিরসনে উপকারী, বীজ শক্তিবর্ধক ও খাবার উপযোগী। মূলের ক্বাথ অজীর্ণ ও পেটের শূল বেদনায় ব্যবহার করা হয়। কম্বোডিয়ায় খোসপাঁচড়া, চুলকানি ইত্যাদি চর্মরোগে পাতার লোকজ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশে তরুক্ষীর বা দুধকষ দিয়ে ঘায়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ গাছ চট্টগ্রাম ও ঢাকা জেলায় সংখ্যায় বেশি। অন্যান্য স্থানেও অল্পবিস্তর দেখা যায়।
মোকারম হোসেন: প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক