সাংবাদিকতা পেশাই ঝুঁকির। তারপরও বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা নানাভাবে নিজেদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। দেশের নানা আইনে সাংবাদিকেরা কী লেখলে কী শাস্তি পাবেন, তা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু সত্য প্রচার করলে কী ধরনের আইনি সহায়তা বা সুরক্ষা দেওয়া হবে, তা আইনে উল্লেখ করা হয় না।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। ‘জলবায়ু রাজনীতির প্রেক্ষিত ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব। আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য কোনো আইন নেই, সাংবাদিকদের এমন দাবির সঙ্গে তিনি কিছুটা একমত। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সৎ, সাহসী ও পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য হলেও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকা দরকার।’ এ সময় তিনি সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয়ে কাজ করছেন বলে জানান।
যেসব তথ্য দিতে আইনি বাধা নেই—এমন তথ্যও সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা দিতে চান না। বিষয়টিকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, তথ্য চাইলে প্রত্যেক স্তরের সরকারি কর্মকর্তারা একটু ডিফেন্সিভ হয়ে যান। মানে কেন চাচ্ছে—এ রকম একটা প্রবণতা আছে। তবে এর জন্য আমি কাউকে দায়ী করি না। দুই শ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন, পাকিস্তান আমল, স্বাধীনতার পর গণতন্ত্রের ব্যত্যয়ের কারণে ‘মানসিকতা ও রকমই আছে’ বলে মনে করেন তিনি। এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য কাজ করবেন বলেও আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী।
গতকাল শুক্রবার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রকাশিত সূচক অনুযায়ী, বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় এবার দুই ধাপ পিছিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরএসএফের মেথোডলোজিতে অনেক দুর্বলতা আছে। এখানে তারা যে বিভিন্ন দেশের স্কোরিং করছে, যাদের কাছ থেকে মতামত নিচ্ছেন, তাতে কিছু মানুষের মতামত প্রতিফলিত হচ্ছে। সেটা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতিফলন হচ্ছে না।
এই আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, এখন এমন একটি সময়, যখন সারা বিশ্বে সাংবাদিকেরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। বিশ্বের মাত্র ১৩ ভাগ মানুষ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ভোগ করে উল্লেখ করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি বলেন, ‘তারপরও বলব যে আমরা সাংবাদিকেরা বাংলাদেশে নানাভাবে চেষ্টা করছি, নিজেদের টিকিয়ে রাখার।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, এই মুহূর্তে পরিবেশ সাংবাদিকতাও চ্যালেঞ্জের মুখে। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবগুলো তুলে ধরে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন আইনে আপনি (সাংবাদিকেরা) কী লিখলে কী শাস্তি পাবেন, এটা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু কী সত্য প্রচার করলে আপনাকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে বা আইনি সুরক্ষা থাকবে, সে বিষয়টি কিন্তু উল্লেখ করা হয় না। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে ১১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে, তা সরকার কীভাবে খরচ করেছে, তা জানতে চান শওকত মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন, নগর উন্নয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পরিচালক মো. লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কম কার্বন নিঃসরণ করেও জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সেই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের—বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব। আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সেমিনার উপকমিটির আহ্বায়ক জুলহাস আলম।