ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন এবং সোসাইটিকে অবসায়ন বিষয়ে দেওয়া নির্দেশনা বহাল রয়েছে।
বিচারিক আদালতের রায়ে দেওয়া ওই নির্দেশনার বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড আপিলটি করেছিল।
রায়ের বিষয়টি আজ শনিবার জানিয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের করা আপিল খারিজ করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। ফলে সোসাইটি অবসায়ন করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করতে বিচারিক আদালতের রায়ে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা বহাল রইল। কমিটি এখন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। কমিটি ৮ লাখ ৫০ হাজার ভুক্তভোগী গ্রাহককে তাদের দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দিতে পারবে।’
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলায় ২০২২ সালের ১২ মে রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক। রায়ে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন ও কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি আসামিদের ও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে থাকা অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি বা অর্থ ডেসটিনির শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে গণ্য হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড অবসায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধককে নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটির গাইডলাইন অনুসারে অবসায়ন করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। ডেসটিনির ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সংগত উপায়ে অর্থ বিতরণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তথ্য অনুসারে, অবসায়ন ও ছয় সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশনাসংক্রান্ত রায়ের অংশবিশেষের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ২০২২ সালের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল করে। হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে অবসায়ন ও কমিটি গঠনসংক্রান্ত নির্দেশনার কার্যক্রম স্থগিত করেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করে দুদকের আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠান। চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ চলমান রেখে গত মে মাসে আপিল বিভাগ ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের করা আপিলটি হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় আপিলের ওপর শুনানি হয়।
আদালতে আপিলকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম মঈনুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের আইনজীবী এম মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।’
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ-পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুলসহ ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। রাজধানীর কলাবাগান থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই মামলায় মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে উভয় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আর ট্রি প্ল্যান্টেশনের মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৩। রফিকুলসহ ১২ জনের নাম দুটি মামলাতেই রয়েছে।