মানব পাচার নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদন

উদ্যোগ বেড়েছে, তবে এখনো অনেক ঘাটতি রয়েছে

মানব পাচার রোধে ন্যূনতম যা করা প্রয়োজন, তা পুরোপুরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এ লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ দেখা গেছে। মানব পাচার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

‘ট্রাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ধাপের নজরদারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এই ধাপে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্য রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। গত বছরের প্রকাশিত প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ দ্বিতীয় ধাপে ছিল।
প্রতিবেদনে দেশগুলোর মানব পাচার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে তিনটি ধাপে।

যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইনের (টিভিপিএ) বিষয়গুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ধাপগুলো তৈরি করা হয়েছে। মানব পাচার বন্ধে যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদণ্ড অর্জন করতে পেরেছে, সেগুলোকে প্রথম ধাপে রাখা হয়েছে। যেসব দেশ ন্যূনতম মানদণ্ড অর্জন করতে পারেনি, কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে দ্বিতীয় ধাপে। আর যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদণ্ডও অর্জন করতে পারেনি, আবার পাচার বন্ধে উল্লেখযোগ্য চেষ্টাও চালাচ্ছে না, সেগুলোকে শেষ ধাপে রাখা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত বছরের তুলনায় মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের বাড়তি উদ্যোগ দেখা গেছে। যেমন পাচারকারীদের বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো পাচারের শিকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে মামলার তদন্তে গুরুত্বারোপ এবং বিদেশে জনবল পাঠানোয় যুক্ত সরকারি সংস্থাগুলোর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফি কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।  

মানব পাচার রোধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যূনতম মানদণ্ড বজায় রাখতে পারেনি। যেমন, দেশের ভেতরে যৌনকর্মী হিসেবে মানব পাচার বন্ধ এবং পাচারের সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে না। ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রচেষ্টাও আগের মতো অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতের বিচারে পাচারকারীদের বড় একটি অংশকে কারাদণ্ডের বদলে জরিমানা করা হচ্ছে। এটা মানব পাচার রোধে সরকারের প্রচেষ্টাকে বাধার মুখে ফেলছে এবং ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশে মানব পাচার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে পাচারসংক্রান্ত ঘটনাগুলো তদন্ত ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার প্রচেষ্টা বৃদ্ধি, উল্লেখযোগ্য মেয়াদে কারাদণ্ডের মতো যথাযথ সাজা প্রদান, সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুন্যালে যুক্ত ব্যক্তিদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বাড়ানো, পাচারের শিকার ব্যক্তিদের জন্য সেবা বৃদ্ধি, রোহিঙ্গাদের পাচারের অভিযোগগুলো তদন্ত ও বিচারের প্রচেষ্ট বৃদ্ধি।