চাকরিতে ১৫ বছরের বঞ্চনার প্রতিকার দিতে কমিটি করল সরকার

বিগত ১৫ বছরে চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের প্রতিকারের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। পাঁচ সদস্যের এই কমিটি ২০০৯ সাল থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এই সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।

আজ সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। সাবেক অর্থসচিব ও বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি।

এই কমিটি আবেদন করার সময় নির্ধারণ করে দিতে পারবে এবং প্রতিকারের বিষয়ে সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বা একসঙ্গে জমা দিতে পারবে। তবে আদালতের সুস্পষ্ট আদেশ রয়েছে এমন বিষয়গুলো এই কমিটির আওতার বাইরে থাকবে। কমিটি অনধিক তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবে।

এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই কমিটির কাজের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি যথোপযুক্ত দপ্তর ও প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করবে। কমিটি প্রধানের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি যথোপযুক্ত যানবাহনেরও ব্যবস্থা করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রশাসনে পদোন্নতিসংক্রান্ত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভার সদস্যরা প্রতি সভার জন্য যে পরিমাণ সম্মানী পেয়ে থাকেন, এ কমিটির সদস্যরাও একই খাত থেকে সমপরিমাণ সম্মানী পাবেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জনপ্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা ক্যাডারসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। একই সঙ্গে পদোন্নতি ও নতুন করে নিয়োগও দেওয়া হচ্ছে।

এক মাসে ৬৭ জনের চুক্তি বাতিল, ওএসডি ২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন ৮ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেসব কাজ করেছে তার একটি বিবরণ প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে, শুধু আওয়ামী মতাদর্শী না হওয়ার কারণে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত পিএসসির সুপারিশ করা অনেক প্রার্থী নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮ আগস্টের পর ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের হাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তাই যাঁরা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উপস্থিত হতে পারেননি, তাঁদের পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা গ্রহণের জন্য পিএসসি ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫৫ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যাচাই-বাছাই করার জন্য স্পেশাল ব্রাঞ্চে (এসবি) পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ামাত্র নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় চুক্তি পাওয়া ৬৭ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে (৭ সেপ্টেম্বরের আগপর্যন্ত)। বাতিলের ফলে শূন্যপদগুলোতে জুলাই চেতনার সঙ্গে সংগতি রেখে নতুনভাবে ২৪ জন কর্মকর্তাকে চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অতীত কার্যকলাপ বিবেচনায় ৬ জন সচিব, ৮ জন অতিরিক্ত সচিব, ১০ জন যুগ্ম সচিবকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। এই তথ্যটি ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী বাধ্যতামূলকভাবে জমার নির্দেশ দেওয়ার কথাও জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকদের প্রত্যাহার, দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তুলতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন ও শৃঙ্খলা সংহত করার লক্ষ্যে বহুমুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতি বঞ্চিত এবং অবসরে যাওয়া কর্মচারীদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পাওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক আবেদন পাওয়া গেছে। আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।