সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে। ঢাকা, ১ আগস্ট
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে। ঢাকা, ১ আগস্ট

ছাত্র-জনতার হত্যার বিচার ও সহিংসতাকারীদের শাস্তি দাবি

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে যাঁরা শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে সামনে রেখে অগ্নিকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করেছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির দাবিও করেছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে এ দাবি জানানো হয়। ‘কোটা আন্দোলনকে ঘিরে প্রতিটি হত্যাকাণ্ড, নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের বিচার নিশ্চিত করা’র দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংস ঘটনায় সব নিহত ব্যক্তির প্রতি শোক প্রকাশ করে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে মেট্রোরেলের লাইনের নিচের অংশে শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা ব্যানার নিয়ে হাতে হাত ধরে মানববন্ধন রচনা করেন। শোক প্রকাশের পরে সমবেত কণ্ঠে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ পরিবেশন করেন শিল্পীরা। আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী আশরাফুল আলম।

মানববন্ধনে নাট্যব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এমন মৃত্যু, অগ্নিকাণ্ড, ধ্বংসলীলা দেখতে হবে ভাবতে পারিনি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশে এমন দৃশ্য দেখব, তার প্রস্তুতি ছিল না। এই যে বিপুল শোক ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল, তার কারণ গভীরভাবে খুঁজে দেখতে হবে। আমরা তরুণদের ভাষা বুঝতে পারিনি। তাঁদের হয়তো ভুল থাকতে পারে। কিন্তু তাঁদের ভুল শুধরে দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, নির্মোহভাবে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারেরই প্রধান দায়িত্ব। তিনি বলেন, দেশকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সবার। স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক শক্তি ছাত্রদের সামনে রেখে পেছন থেকে ষড়যন্ত্র করেছে। সুপরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘একটি চক্র দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের সকল অর্জনকে তারা নস্যাৎ করে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আগেও তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল।’ তিনি চারুকলার শিক্ষক ও শিল্পীদের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী বলেন, সরকার ও রাষ্ট্র এক নয়। সকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হতেই পারে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ দেশের সব মানুষের। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তি শিল্পী আহকাম উল্লাহ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর থেকে কোটা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। আজ সেখান থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মীরা শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার দাবি করছে। ছাত্রদের আন্দোলন ছিল ন্যায়সংগত। কিন্তু তাদের ভেতর যে অশুভ চক্র অনুপ্রবেশ করে মেট্রোরেল, টেলিভিশন কেন্দ্র, সাইবার হাউসসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে তাদের শনাক্ত করে বিচার করতে হবে।

জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আমরা মনে করি শিক্ষার্থীদের কোটা সংক্রান্ত মূল দাবি উচ্চ আদালতের রায় ও সরকারের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার জন্য সকাল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই আন্দোলনের সুযোগে একটি বিশেষ মহল রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস করেছে। তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। সাংস্কৃতিক কর্মীর আগেও শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য রাজপথে নেমেছে। শান্তির জন্য সংস্কৃতিকর্মীদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সংগীত সমন্বয় পরিষদের সম্পাদক মানজার চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনের আরও বক্তব্য দেন,পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুল ইসলাম, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদে সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান, যাত্রাশিল্পী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সহসভাপতি বিশ্বজিৎ রায়, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সহসভাপতি নিগার চৌধুরী, চারুশিল্পী সংসদের  সাবেক সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল চন্দন রেজা প্রমুখ।

শ্রাবণের শোকগাথা

আগস্টের প্রথম দিন থেকে মাসব্যাপী আবৃত্তি সন্ধ্যার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সমন্বয় পরিষদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শোক জানাতে মাসব্যাপী ‘শ্রাবণের শোকগাথা’ নামে এই আয়োজন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মোমবাতি প্রজ্বালন করে এই আবৃত্তির আয়োজনের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ জানান, প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এখানে বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠন ও বিশিষ্ট বাচিক শিল্পীরা আবৃত্তি পরিবেশন করবেন।