দেশে ২০৩০ সালে মাতৃমৃত্যুর হার হতে হবে ৭০। বর্তমানে এই হার ১২৩।
বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ক্রমেই কমছে। একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, ২০ বছরে দেশে মাতৃমৃত্যু ৭২ শতাংশ কমেছে। কমার পরও প্রতিদিন সন্তান জন্মদানজনিত জটিলতায় ১০ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে।
‘মাতৃমৃত্যুর প্রবণতা: ২০০০ থেকে ২০২০ সাল’ শিরোনামের এই প্রতিবেদন যৌথভাবে তৈরি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ। প্রতিবেদনটি গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি দুই মিনিটে বিশ্বে একজন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে।
প্রতিবেদনের মুখবন্ধে বলা হয়েছে, সন্তান জন্মদানের সময়টি জীবনের, মৃত্যুর নয়। কিন্তু এই মুখবন্ধ যখন আপনি পড়ে শেষ করবেন, ততক্ষণে কমপক্ষে একজন মায়ের মৃত্যু হয়ে গেছে গর্ভধারণজনিত অথবা প্রসবের জটিলতায়। আর এসব মৃত্যু বেশি হচ্ছে নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। প্রতিবেদনে মাতৃমৃত্যুর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গর্ভধারণকালে, প্রসবের সময় এবং প্রসবের ৪২ দিনের মধ্যে মৃত্যু হলে তা মাতৃমৃত্যু।
প্রতিবেদন বলছে, দেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১২৩। অর্থাৎ ২০২০ সালের হিসাবে ১ লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ১২৩ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। ২ দশক আগে অর্থাৎ ২০০০ সালে এই হার ছিল ৪৪১। ২০ বছরে মাতৃমৃত্যু কমেছে ৭২ শতাংশ। এবং বছরে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমছে।
দেশে মাতৃমৃত্যু কমলেও এখনো তা উদ্বেগজনক। বছরে ৩ হাজার ৭০০ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে ১০ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে এ কারণে। এটাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর হার এখনো তিন অঙ্কে রয়ে গেছে। ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় এই হার দুই অঙ্কে। বিশ্বের অনেক দেশে তা এক অঙ্কে।’
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ৵মাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে মৃত্যুমৃত্যুর হার ৭০–এ নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। মাতৃস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী সাত বছরের মধ্যে তা অর্জন করা দুরূহ হয়ে পড়বে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে মাতৃমৃত্যুর হার বেশি আফগানিস্তান, নেপাল ও পাকিস্তানে। দেশ তিনটিতে এই হার যথাক্রমে ৬২০, ১৭৪ ও ১৫৪। ভারতে মাতৃমৃত্যুর হার ১০৩। অন্যদিকে ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় এই হার যথাক্রমে ৬০, ৫৭ ও ২৯। পরিসংখ্যান বলছে, ১ লাখ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে শ্রীলঙ্কায় ২৯ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে।
প্রতিবেদন বলছে, ২০০০ সালে ১ লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৩৩৯ মায়ের মৃত্যু হতো। ২০২০ সালে সেটি কমে হয় ২২৩। অর্থাৎ মাতৃমৃত্যুর হার ২০ বছরে এক–তৃতীয়াংশ কমেছে। ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছিল। সেই তুলনায় শেষের ৫ বছর অর্থাৎ ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কিছুটা স্থবির প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
জাতিসংঘসহ অন্য সংস্থাগুলো বলছে, এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবেদনে পরিবার–পরিকল্পনা খাতে জরুরিভাবে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ধাত্রীর ঘাটতি পূরণের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।