জীবনের সামনের দিনগুলোতে কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নিজের স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি ভালো মানুষ হওয়ার প্রত্যয় জানাল কৃতী শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার এ বছরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা এ প্রত্যয় ব্যক্ত করে। এই কৃতী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর অদূরে বিনোদনকেন্দ্র আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমে সংবর্ধনা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র সহায়তায় আজ এ উৎসবে অংশ নিতে প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী আগাম নাম নিবন্ধন করেছিল।
ফ্যান্টাসি কিংডমে গতকাল সোমবার ‘শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা’র দুই দিনের উৎসব শুরু হয়েছিল।
এ বছর সারা দেশে প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। ‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগান নিয়ে গত ২৫ জুন সৈকত শহর কক্সবাজারে জেলার কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে এ আয়োজন শুরু হয়েছিল। শেষ হবে ২৪ জুলাই।
পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভার সহযোগিতায় এ আয়োজন করা হচ্ছে। ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সকাল থেকে কৃতী শিক্ষার্থীরা ফ্যন্টাসি কিংডমে আসতে থাকে। অনেকে, বিশেষ করে মেয়েদের সঙ্গে করে এনেছিলেন তাদের মা-বাবা। কৃতী শিক্ষার্থীদের এই আনন্দময় গৌরবে শরিক হতে অনেকের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকেরাও এসেছিলেন। সকালে এসে ফ্যান্টাসি কিংডমের প্রবেশপথের পাশের বুথ থেকে শিক্ষার্থীরা সকালের নাশতা, দুপুরের খাবারের কুপন ক্রেস্ট, ফ্রি রাইড ও প্রবেশের রিস্ট ব্যান্ড সংগ্রহ করে। এই পাট চুকিয়ে ভেতরে ঢুকে তারা মেতে ওঠে অনাবিল আনন্দ-উল্লাসে।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আজ দুপুরের দিকে সংবর্ধনা উৎসব মঞ্চের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আগের দিনের মতো আজকের অনুষ্ঠানও সাজানো হয়েছিল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য, গুণী শিক্ষকদের সম্মাননা, তারকাকথন আর জনপ্রিয় শিল্পীদের মনমাতানো গানে গানে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন ও উপস্থাপক মৌসুমী মৌ।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের পরিচালনায় শুরু হয় কৃতী শিক্ষকদের সংবর্ধনা পর্ব। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ভালো মানুষ হতে হলে সব সময় অভিভাবক ও শিক্ষকদের সম্মান জানাতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মতো কৃতী শিক্ষকদেরও আজ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাঁদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক কবি সাজ্জাদ শরিফ।
সংবর্ধনাপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা হলেন মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিদুর রহমান, সুরেন্দ্র কুমার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম, কানিজ ফাতেমা গার্লস হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান, আফজাল-রমজান উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আরশেদ আলী বিশ্বাস, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. জাকির হোসেন, খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কুসুম আলী, গাজীপুরের শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মণ্ডল মাধব কুমার চন্দ্র, রাজিয়া সুলতানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার আক্তার, বিওএফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কাইয়ুম ও জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপন চন্দ্র সরকার।
আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে ‘না’ বলার অঙ্গীকার করান। তিনি অনুষ্ঠানের সহযোগীদের ধন্যবাদ জানান।
পরে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের পরিচালনায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। শুরুতেই সাজ্জাদ শরিফ শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমরা সফল হয়েছে, এখন তোমাদের সার্থক হতে হবে। সফলতা নিজের কিন্তু সার্থকতা সবার জন্য। যখন তোমাদের সাফল্যের সুফল সমাজ ও দেশের মানুষ পাবে, তখনই তোমরা সার্থক হবে।’
এ পর্বে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের উপাচার্য ড. ইমরান রহমান শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচির বাইরেও জ্ঞানার্জনের পরামর্শ দেন। বিশেষ করে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করেন। উপাচার্য নিজেও গান করেন। সঞ্চালকের অনুরোধে তিনি জন লেননের বিখ্যাত গান ‘ইমাজিন’-এর কয়েক লাইন গেয়ে শোনান।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ড. কামরুল আহসান শিক্ষার্থীদের নীতি, আদর্শ মেনে সৎ ও যোগ্য নাগরিক হওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিটি মুহূর্তে হৃদয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে রাখার আহ্বান জানান।
শিখোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শাহীর চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এরপর তোমাদের সামনে আছে এইচএসসি পরীক্ষা। তারপর জীবনের আরও অনেক বড় ক্ষেত্র।’ তিনি শিক্ষার্থীদের এসএসসির এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানের সহযোগীদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ফ্যান্টাসি কিংডমের হেড অব অপারেশন মেজর (অব.) কাজী জহিরুল ইসলাম ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির হেড অব রিটেইল সেগমেন্ট তাহসিন তাহের। শিশুসাহিত্যিক সাইদুজ্জামান রওশন শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান।
দিলশাদ নাহার কনার কণ্ঠে ‘কিনে দে তুই রেশমি চুড়ি’ গান দিয়ে সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয়। এরপর তিনি একে একে গেয়েছেন ‘ধিম তানা’, ‘দুষ্টু কোকিল ডাকে রে’, ‘লোকাল বাস’সহ বেশ কয়েকটি গান।
সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসান তাঁর জনপ্রিয় গান ‘লাগে উরাধুরা’, ‘দেওরা রে’-এর মতো জনপ্রিয় কয়েকটি গান পরিবেশন করে শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে তোলেন।
সম্প্রতি এভারেস্টজয়ী বাবর আলী শিক্ষার্থীদের শুনিয়েছেন তাঁর বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয়ের রোমাঞ্চকর কাহিনি।
অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে সফলতার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার পরামর্শ দেন।
বেলা শেষে ছিল দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলসের গান। ‘দেখা হবে বন্ধু’, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’—এমন নানা গানে সুর তোলে দলটি। এভাবে সাঙ্গ হয় শিক্ষার্থীদের আনন্দময় এক দিন। জনপ্রিয় গানের সুর আর এক আনন্দময় দিনের স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে যাত্রা করে সবাই।