শাজাহান খান, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার
শাজাহান খান, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার

পাঁচজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সম্পদ অনুসন্ধান করবে দুদক

সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ পাঁচ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এক উপ–প্রেস সচিব ও এক ব্যক্তিগত সহকারীর অবৈধ সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাঁরা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদক তথ্য পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুদকের কমিশন বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

শাজাহান খান ছাড়া অন্য চার মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাবেক সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল ও জান্নাত আরা হেনরি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলমের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়।

দুদকে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও পরিবহন খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে ২০১৪ সালে তলব করে দুদক। সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের নির্বাচনী হলফনামাসহ বিভিন্ন সূত্রে স্ত্রী-কন্যার নামে দিনাজপুর শহরে বাড়ি, বহুতল ভবন, খামারবাড়ি, প্রায় অর্ধশত একর জমি, একাধিক গাড়ি থাকার অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে অসীম কুমার উকিল ও তাঁর স্ত্রী অপু উকিলের বিরুদ্ধেও রাজধানীর ধানমন্ডি, উত্তরা ও নিজ এলাকা নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাট, দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তাঁদের দুই ছেলে সায়ক ও শুদ্ধের নামে বাড়ি রয়েছে। সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জনপূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

পাঁচ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বাইরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) জাহাঙ্গীর আলমের অবৈধ সম্পদের তথ্য অনুসন্ধান শুরু করারও সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, জাহাঙ্গীর আলম তাঁর বাসার পিয়ন ছিলেন, তিনিও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক! হেলিকপ্টার ছাড়া চলেন না। তাঁকে বাদ দিয়ে কার্ড সিজ (জব্দ) করে ব্যবস্থা নিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব-১ আশরাফুল আলম ওরফে খোকনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করবে দুদক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট থেকে উপ-প্রেস সচিবের পদে বসে ঘুষ নিয়ে দলের পদ–বাণিজ্য, সোনা ও মুদ্রা চোরাচালান সিন্ডিকেট পরিচালনা, ম্যাক্স গ্রুপ ও নগদের মতো বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থে নিজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে সম্পদ গড়েছেন। আশরাফুল আলম বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগগুলো কমিশনের বিশেষ তদন্ত শাখা থেকে অনুসন্ধানের জন্য মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। শিগগিরই অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগসহ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।