আধেয় বা কনটেন্ট সরিয়ে নিতে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের কাছে বাংলাদেশ সরকার যত অনুরোধ করেছে, তাতে অর্ধেকের কম ক্ষেত্রে (৪২ দশমিক ৮ শতাংশ) সাড়া পেয়েছে তারা।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে সাড়া দিয়েছে।
গুগল ও টিকটক সম্প্রতি পৃথকভাবে নিজেদের চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের স্বচ্ছতা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে সরকার কী ধরনের আধেয় সরিয়ে নিতে আবেদন করেছে, কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার চিত্র রয়েছে। সরকারের অনুরোধ বলতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া অনুরোধের কথা বোঝানো হয়েছে।
মার্কিন বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলের জনপ্রিয় একটি সেবা ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউব। অন্যদিকে, টিকটকের মালিক চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স।
স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি-জুন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের আধেয় সরানোর অনুরোধের ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রে গুগল কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। টিকটকের ক্ষেত্রে এই হার ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ আধেয় সরাতে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে গুগল ও টিকটকের সাড়া দেওয়ার প্রবণতা কম।
স্বচ্ছতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার গুগলের কাছে মোট ৮০০টি অনুরোধ করে। সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ। এই সংখ্যা ৭৭৭টি। পুলিশ করে ২০টি অনুরোধ। অনুরোধে আইটেম সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭২৪টি। এর মধ্যে ইউটিউবের আধেয় সরানোর অনুরোধ ছিল প্রায় আড়াই হাজার। বাংলাদেশ সরকার ১১৪টি গুগল প্লে অ্যাপস ও ৩০টি ওয়েবসাইট সরাতেও অনুরোধ করেছিল।
স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের অনুরোধের বিপরীতে গুগল ১৬ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রে যথেষ্ট তথ্য পায়নি। সরকারের অনুরোধ পাওয়ার আগেই ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ আধেয় গুগল সরিয়ে নেয়। গুগলের নীতি অনুযায়ী, সরানো হয় ৮ দশমিক ১ শতাংশ আধেয়। আইনগতভাবে সরানো হয় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ আধেয়। ১ দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো আধেয় খুঁজে পায়নি গুগল।
আধেয় সরাতে সরকার যেসব অনুরোধ করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪১ শতাংশ ছিল মানহানিবিষয়ক। এরপরে উল্লেখযোগ্য হলো, সরকারের সমালোচনা ৩৬ শতাংশ, পণ্য ও সেবা-সংক্রান্ত ১২ শতাংশ।
বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ২১ হাজার ৯৪৩টি ভিডিও সরিয়ে নিয়েছে গুগলের অন্যতম সেবা ইউটিউব।
স্বচ্ছতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আধেয় সরিয়ে নিতে একই সময়ে টিকটকের কাছে ৪৭৪টি অনুরোধ করে বাংলাদেশ সরকার। এই অনুরোধে আধেয় সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭২০টি।
স্বচ্ছতা প্রতিবেদন বলছে, এসব আধেয়র মধ্যে টিকটক নিজেদের নীতিমালা অনুযায়ী ৪০২টি সরিয়ে নেয়। সরকারের আইন অনুযায়ী তারা সরিয়েছে ১ হাজার ১১৫টি আধেয়। বাকি ২ হাজার ২০৩টি আধেয়র ব্যাপারে টিকটক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
টিকটকের কাছে ২০টি অ্যাকাউন্ট সরানোর অনুরোধ জানিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে ৮টি অ্যাকাউন্ট সরানো হয় টিকটকের নীতিমালা ভঙ্গের কারণে।
টিকটকের কাছে তথ্য চেয়েও অনুরোধ জানিয়েছিল সরকার। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তথ্য চেয়ে ১৯টি অনুরোধ করা হয়। এর মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার অনুরোধ ১১টি। জরুরি ভিত্তিতে অনুরোধ ৬টি। তবে কোনো ক্ষেত্রেই টিকটক সরকারকে তথ্য দেয়নি।
সরকারের অনুরোধ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বব্যাপী তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। সরকার যে প্রক্রিয়ায় অনুরোধ করছে, তার ভিত্তি সঠিক হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আন্তর্জাতিক আইন ও নিজেদের নীতিমালা মেনে চলে। সরকারকে এগুলো বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ বিষয়ে অনুরোধ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবহারকারীর তথ্য না দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। এতে ব্যবহারকারী সুরক্ষা পায়।