বিগত ১১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত প্রায় দেড় লাখ মানুষ।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। ‘সড়ক সেক্টরে সীমাহীন অব্যবস্থাপনা: দায়িত্ব নেবে কে?’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজক বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
আলোচনা সভায় বিগত ১১ বছরের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তুলে ধরেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি সড়ক খাত সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানান।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, চরম অব্যবস্থাপনা, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের কারণে ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ বছরে দেশে ৬০ হাজার ৯৮০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৩৩৮ জন। আহত ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জন। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। নিহত মানুষের হার ৩৯ দশমিক ৬৫। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পথচারী ১৭ হাজার ১৫০ জন। চালক ১৪ হাজার ৯২৮ জন। এই সময়ে আঞ্চলিক মহাসড়কে ৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং জাতীয় মহাসড়কে ৩১ দশমিক ৭৬ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সড়ক পরিবহন খাতে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ‘প্রেতাত্মারা’ পদে পদে বসে আছে। এখনো সড়কে গণহত্যা বন্ধে, যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘বাংলাদেশে সড়কে যেটা হয়, তা দুর্ঘটনা না, এটা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। গত দুই মাসে বর্তমান সরকারও সড়কে, বাজারে শৃঙ্খলা আনতে পারেনি। পরিবহন খাতের সিন্ডিকেট ভাঙেনি, বরং হাতবদল হয়েছে।’
এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, প্রতিদিন মৃত্যুর শঙ্কা নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হয়। এখনো লাফিয়ে লাফিয়ে বাসে উঠতে হয়। সড়কে শৃঙ্খলা আনা কি খুব কঠিন কাজ? সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিবহনশ্রমিকদের মাসিক বেতনকাঠামোর আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া আমলাদের কারণেও সড়কে শৃঙ্খলা নেই। সড়কে গণহত্যার দায়ে আমলাদেরও দায়বদ্ধ করতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটন। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম শাহাদাত হোসেইন, গণপরিবহন বিশ্লেষক আবদুল হক।