ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গতকাল সোমবার রাত ১০টার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন তল্লাশি ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
গতকাল দুপুরে বিক্ষোভের পর বিকেল থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। হামলা ও সংঘর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শাখার নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। তাঁদের হাতে ছিল হকিস্টিক, লাঠি, রড, জিআই পাইপসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায় অন্তত পাঁচজন অস্ত্রধারীকে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাতে হলে ফেরার পর ছাত্রলীগ তাঁদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনে যুক্ত কি না, তা দেখতে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন তল্লাশি করা হয়েছে। আন্দোলনে যুক্ততা পেলেই মারধর করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেছেন, কোনো কোনো হলে কোটা আন্দোলনে অংশ না নিতে মাইকিংও করা হয়েছে। স্যার এ এফ রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, মাস্টারদা সূর্য সেন হল ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা বলেছেন, গতকাল রাত ১০টার পর থেকে তাঁদের মুঠোফোন তল্লাশি করা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। এর মধ্যে স্যার এ এফ রহমান ও বিজয় একাত্তর—এই দুটি হলে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পেরেছেন এই প্রতিবেদক।
স্যার এ এফ রহমান হলের ছয় শিক্ষার্থীকে মারধরের খবর পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আবদুল বাসিত, সাখাওয়াত হোসেন, লিমন খান ও মোর্শেদ ইসলাম এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ফারুক হোসেন ও তাওহীদ ইসলাম। তাঁদের মধ্যে শেষ তিনজনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, মুঠোফোন তল্লাশি করে হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা তাঁকে মারধর করেছেন।
এ বিষয়ে এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ রফিক শাহরিয়ার বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন।
বিজয় একাত্তর হলে সন্ধ্যার পর থেকে কয়েক ঘণ্টা ফটকে মুঠোফোন তল্লাশি করে শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়। এক ছাত্র বলেন, তিনি টিএসসি থেকে হলে আসছিলেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে হলের ফটকে আটকান এবং ফেসবুকে কোটা আন্দোলনের গ্রুপে যুক্ত থাকায় তাঁকে পেছন থেকে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে মারধর করেন। পরে তাঁর পরিচিত এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী সেখান থেকে সরিয়ে নেন।
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, তিনি চোখে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। তিনি ছাড়াও বিজয় একাত্তর হলের অনেক শিক্ষার্থী এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।
বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুল বাছির বলেন, শিক্ষার্থীরা কেউ অভিযোগ করলে তাঁরা পদক্ষেপ নেবেন।
মারধরের এসব ঘটনার বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমানের মুঠোফোনে করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগেরও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং হল শাখার আসন্ন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী হেদায়েতুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, তিনি একুশে হলের সামনে খাবারের দোকানে খেতে গিয়েছিলেন। এ সময় তাঁকে ছাত্রলীগ হিসেবে শনাক্ত করে গতকাল রাত ১০টা ৫০ মিনিটে মারধর করা হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তিকেও মারধর করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও ফজলুল হক মুসলিম হল শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনকারীরা গতকাল সোমবার তাঁদের কক্ষ ভাঙচুর করেছেন।