দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করা, একজন ব্যক্তি কয়টি মেয়াদ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা যাতে না হন—এমন বিধান করার বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। মূলত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং এক ব্যক্তির হাতে যাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হয়, সে জন্য সংবিধানে এই বিধানগুলো যুক্ত করার প্রস্তাবের কথা বিবেচনা করছে কমিশন।
গতকাল রোববার সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে এ কথা জানিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য আলী রীয়াজকে প্রধান করে গত ৭ অক্টোবর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
কমিশন নিজেরা দেশের বিদ্যমান সংবিধান ছাড়াও বিভিন্ন দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছে। সংবিধানবিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সঙ্গে সংবিধান সংস্কার বিষয়ে মতবিনিময়
করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে সারা দেশে একটি জরিপও চালানো হয়েছে। এসব মতামত পর্যালোচনা করে আগামী ৬ জানুয়ারির মধ্যে কমিশনের প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করার কথা রয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন দেশের বিদ্যমান সংবিধান, ১৯৭২ সালের সংবিধান এবং এরপর বিভিন্ন সময়ে হওয়া সংশোধনী—এসব নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনা, আইনি ত্রুটি-বিচ্যুতি পর্যালোচনা করেছে। পাশাপাশি ১২০টি দেশের সংবিধানও পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর বাইরে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও নানাভাবে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে। অংশীজনদের বড় অংশ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছেন। কমিশন এটি বিবেচনায় নিচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ হয়েছিল। এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে হবে। এটি তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন।
আলী রীয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তি দুবারের বেশি থাকতে পারবেন না—এমন বিধান করার কথা বলেছেন অংশীজনদের অনেকে। এখানে দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। কেউ বলেছেন, এক ব্যক্তি জীবনে দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এক ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এমন বিধান করার কথা। এ বিষয়ে কমিশন এখনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়নি। এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। দুটি প্রস্তাবের ইতিবাচক, নেতিবাচক দিক বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তি দুবারের বেশি থাকতে পারবেন না—এমন বিধান করার চিন্তার পেছনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করে আলী রীয়াজ বলেন, কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলে জবাবদিহির জায়গা সীমিত হয়ে যায়। এতে ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্রের উদ্ভব হয়। এ কারণে মেয়াদের প্রশ্ন এসেছে।
জরিপ এবং ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মতামত পেয়েছেন জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, মানুষের আকাঙ্ক্ষা হলো ক্ষমতা যেন এককেন্দ্রিক না হয়। অনেকেই বলেছেন, একই ব্যক্তি যেন একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান না হন। এটি হলে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নষ্ট হয়, জবাবদিহি কমে আসে এবং একপর্যায়ে জবাবদিহি তিরোহিত হয়।