বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে বাংলাদেশ কী পেল

এই বিশ্বকাপ বাংলাদেশের সমাজপাঠ নিয়ে ভালো একটি দৃষ্টান্ত হয়ে এসেছে। ঘরোয়া ফুটবলের জোয়ার আনার জন্য আবারও একটা ধাক্কা এল। 

রাত জেগে কাতার বিশ্বকাপের খেলা দেখছেন দর্শনার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল মাঠে

ভৌগোলিকভাবে ২০২২ সালেই বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। কোভিড–পরবর্তী দুনিয়া, ইউক্রেনের যুদ্ধ, বিশ্বরাজনীতিতে শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তনের পটভূমিতে প্রথমবারের মতো মুসলিম কোনো দেশে আয়োজিত এই বিশ্বকাপের দিকে খেলার বাইরেও অন্যান্য বিষয়ে সবার নজর ছিল বেশি।

কাতারের মতো পুঁচকে, ফুটবল ঐতিহ্যবিহীন একটি দেশকে এই আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ায় ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার ওপর ক্ষোভ ছিল অনেকেরই, বিশেষত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের। এর জের ধরে ফিফাতে বহুদিন ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা প্রভাবশালীদের অনেকে দুর্নীতির দায়ে পদ হারিয়েছেন।

এবারের বিশ্বকাপের খরচের বিষয়টিও ছিল আলোচিত। এবার খরচ হয়েছে ২২০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের ২১টি বিশ্বকাপ আসরের মোট খরচের চেয়ে বেশি। এই বিশ্বকাপ শুধু ফুটবল উত্তেজনার বিচারে অন্যতম সেরা বিবেচিত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এই বিশ্বকাপ জিতে লিওনেল মেসি সর্বকালের সেরাদের কাতারে নিজের অবস্থান আরও পোক্ত করলেন। ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর সম্ভবত মেসিই প্রায় এককভাবে, একক নেতৃত্বে একটা দলকে বিশ্বকাপ জেতালেন।

মেসির এই জয়টা এতই দারুণ ছিল যে আর্জেন্টিনার ঘোর বিরোধী ব্রিটিশ গণমাধ্যমেও এর উচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে। শুরুর দিকে কাতার বিশ্বকাপ বর্জনের ডাক দেওয়া, নানা অসংগতি তুলে ধরেছিল যেসব গণমাধ্যম, শেষ দিনেও তারা মেসির বিশেষ পোশাক পরা নিয়ে অবশ্য কিছুটা শোরগোল করেছে। তবে সেই শোরগোলে উল্টো এটাই প্রমাণ হয় যে পশ্চিমা গণমাধ্যম ক্ষেত্রবিশেষে ‘ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনের’ পক্ষাবলম্বন করে ফেলে।

মেসিকে সেদিন যে পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়, তার নাম বিশত। আরব সংস্কৃতিতে বিশিষ্ট মেহমানদের সর্বোচ্চ সম্মানের অংশ হিসেবে এই পোশাক উপহার দেওয়া হয়। ব্যাপারটি ইসলামি সংস্কৃতির অংশ ধরে নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমের যে আপত্তি, তা কেবল মূর্খতাপ্রসূতই নয়, চোরা বর্ণবাদও। অবশ্য বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসলামের জয় হিসেবে বিষয়টি দেখানো মুদ্রার অপর পিঠের মতোই।

বাংলাদেশে উচ্ছ্বাস

খোদ আর্জেন্টিনার চেয়েও হয়তো বেশি ম্যারাডোনা–ভক্তের দেশ বাংলাদেশ। ম্যারাডোনা নিষিদ্ধ হওয়ার পর এই বাংলাদেশেই আত্মহত্যার ঘটনার উদাহরণ আছে। ১৯৯০ সালের ৮ জুলাই বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে রেফারি কোডেসাল পেনাল্টির বাঁশি বাজানোর ঘটনায় রাস্তায় রাস্তায় মিছিল হয়েছিল।

ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ জয়ে যে ভক্তকুলের জন্ম হয়েছিল, যাঁদের প্রভাবে বুঁদ হয়েছে পরের প্রজন্মও, তাঁদের জন্য মেসিয়াহ হয়ে আসেন মেসি। সাত সমুদ্র তেরো নদী ওপারের এক নায়কের জন্য গোটা এক জনপদের ৩৬ বছরের অপেক্ষা আর তাঁর রূপকথার মতো বাস্তবায়ন যেকোনো কল্পকাহিনিকেও ছাপিয়ে যায়। তা–ও কি, এমন এক বিশ্বকাপ যার আগাপাশতলা হলিউডের রোমাঞ্চকর সিনেমাকে অক্লেশে হার মানায়। মেসির বিজয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব বিজয়ও তাই বিশ্বের নজর কাড়ে।

কাতার বিশ্বকাপ কাভার করতে যাওয়া একাধিক বাংলাদেশি সাংবাদিকের বয়ানে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের আর্জেন্টিনাপ্রীতি তাঁদের অন্য রকম সম্মান দিয়েছে। টিএসসিতে লাখো মানুষের ভিড়সহ সারা দেশে আনন্দ–উৎসব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাসভর উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রের তলানিতে থাকা বাংলাদেশ নামটাও উচ্চারিত হয়েছে। এমন আগ্রহের কারণে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলার আলাপ শোনা যাচ্ছে। সে দেশের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। বিশ্বকাপটাও নাকি বাংলাদেশ ঘুরে যেতে পারে।

এক মাসে মৃত্যু ১৫

বিজয়ের এই দারুণ আবহেও অবশ্য ভোলার উপায় নেই যে এই বিশ্বকাপের আগমনেই এক মাসে অন্তত ১৫ জন মারা গেছেন বাংলাদেশে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যায়, খেলা দেখার আয়োজনে নুডলস খাওয়া নিয়ে বিবাদে নিহত হওয়ার ঘটনা, খেলা শেষে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সমর্থক দুই কিশোরের মধ্যে ঝগড়ার জের ধরে অভিভাবকেরাও জড়িয়ে পড়েন সংঘাতে। পরদিন সকালে এক কিশোরের বাবাকে হত্যার খবর পাওয়া যায়।

কিন্তু এসব ঘটনা বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না। মরক্কো বনাম ফ্রান্সের খেলা নিয়ে দুই দেশেই সংঘাত ও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভারতের কেরালায় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ইউরোপ আর আফ্রিকার কিছু স্থানেও উত্তেজনা দেখা যায়। যদিও খোদ কাতারে ফুটবল হুলিগানদের তেমন ঝুটঝামেলা ছিল না।

এ তো গেল রাস্তায় হানাহানি আর মৃত্যুর খবর, বহুগুণ উত্তপ্ত ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। উগ্র সমর্থকেরা বিপক্ষকে আক্রমণ করতে গিয়ে সব রকম ভব্যতা ছাড়িয়ে গেছেন অনেক ক্ষেত্রে। এমনকি অন্য বিষয়ে যৌক্তিক মানুষেরা অযৌক্তিকভাবে নিজের দল ও খেলোয়াড়দের বাজে আচরণকেও সমর্থন দিয়েছেন খোঁড়া অজুহাতে। জুলেরিমে ট্রফি বিশ্বকাপ না—এমন চূড়ান্ত রকম বালখিল্য আলাপ তুলতে বাধেনি বিশিষ্টজনদেরও। এই উত্তাপ এখনো চলছে।

বিশ্বকাপের সমাজপাঠ

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এমন উত্তাপে ফুটবল আসলে নিমিত্তমাত্র। ফুটবলের উত্তেজনা একজনের ভেতরের গ্লানি, অভব্যতাকেই টেনে আনে। আগের পুষে রাখা ক্রোধ খেলার সময় প্রকাশ পায়। ফুটবল যে পরাবাস্তব জগৎ তৈরি করে, সেখানকার মাদকে বাস্তব জগতের রাশ টেনে রাখতে ভুলে যায় অনেকে।

আবার এই কথাও মনে রাখতে হবে, এই অঞ্চলের মানুষ পালাপার্বণ ভালোবাসে। ফলে যেকোনো উৎসবেই তারা জড়ো হতে চায়। পক্ষবিপক্ষের চাপান–উতোর বাড়তি উন্মাদনা তৈরি করে। এই জনপদের মানুষ এই উন্মাদনার জন্য উন্মুখ। শুধু খেলায় নয়, রাজনীতি, সাহিত্য, দর্শন নিয়েও চায়ের দোকানে, অফিসে, বাসের ভেতর বাহাস করে। সামনাসামনি যোগাযোগের সুযোগ কমে আসায় আর সহজে অংশগ্রহণ করার সুবিধা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতি সক্রিয় থাকা সেই উন্মাদনারই প্রতিফলন। বিশ্বকাপের পরিসরটা অনেক বড় বলে উত্তেজনার পরিধিও বড় হয়।

পতাকা নিয়ে উত্তেজনা মানুষের গোত্রবদ্ধ হওয়ার সহজাত প্রবৃত্তিকে তুলে ধরে। বাংলাদেশে এখন ঘরোয়া ফুটবল মৃতপ্রায়, ফলে এই চর্চা নেই। কিন্তু ইউরোপ তো বটেই, আফ্রিকার দেশগুলোতেও কেবল পতাকা নয়, দানবীয় আকৃতির টিফো (বিশাল আকারের ব্যানার, যেগুলোতে সমর্থকেরা ক্লাবের বাণী কিংবা খেলোয়াড়দের ছবি খোদাই করে আনেন) দেখা যায় ভরা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। আর অপর দেশের সমর্থনে বুঁদ হয়ে যাওয়াটাও বাংলাদেশিদের একার দোষ নয়।

আফ্রিকার অন্তত পাঁচজন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল আর্সেনালের সমর্থক। বিশ্বকাপ চলাকালে সংসদে বিরোধীদের কটাক্ষ করতে গিয়ে ইংলিশ ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়ারের সঙ্গে তুলনার ঘটনাও শোনা গেছে। ডেভিড গোল্ডব্লাট, সাইমন কুপারসহ বিখ্যাত ফুটবল লেখকদের বইয়ে জানা যায়, আফ্রিকায় ইউরোপের বিভিন্ন লিগ দেখা নিয়ে চরম পর্যায়ের মাতামাতির কথা।

কিন্তু পতাকা টাঙানো নিয়ে মৃত্যু যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মনে করিয়ে দেয়, তা হচ্ছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনগুলো অব্যবস্থাপনা এবং খামখেয়াল। হৃদ্‌রোগের ব্যাপারে আমাদের নাগরিকেরা কতটা সচেতন, সেটাও ভাবার দরকার আছে। আদৌ এসব নাগরিক নিয়মিত স্বাস্থ্যসুবিধা পান কি না, সেই প্রশ্নও করা দরকার। ফুটবল বিশ্বকাপ সামাজিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে অসন্তোষের পাশাপাশি এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও সামনে এনেছে।

খেলার ভক্ত নাকি মেলার ভক্ত

তবে সেসব বড় আলাপ আপাতত বাদ দিয়ে আবার ফুটবলেই ফেরা যাক। এই অঞ্চলের মানুষ কি আসলেই খেলার ভক্ত নাকি মেলার ভক্ত? ফুটবল নিয়ে এই উচ্ছ্বাস কি খেলাটার প্রতি ভালোবাসায় নাকি উৎসবে অংশ নেওয়ার টানে? নিজের দল জেতার চেয়েও বিপক্ষ দল হারল কি না, এই নিয়ে অনেক বেশি উৎকণ্ঠা কেন?

উত্তরগুলো হতাশাব্যঞ্জক। ঘরোয়া ফুটবল না হয় ভীষণভাবেই মৃতপ্রায়, কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে এই দেশের উন্মাদনা তো সর্বোচ্চ মাত্রার। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট দেখতে স্টেডিয়ামে কতজন মানুষ যায়! জাতীয় দলের জজবা না থাকলে কেবল খেলার আনন্দ পাওয়ার জন্য কজন খেলাটা দেখে। বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী আশীষ মিত্র তাঁর তাও অব ক্রিকেট বইয়ে বলেছেন, ভারতবর্ষে ক্রিকেট হচ্ছে রামলীলার মতো। লোকে খেলার নামে আসলে একজোট হয়ে তামাশা দেখতে যায়। ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাস আর আইপিএলের উদ্ভব নিয়ে তাই ব্রিটিশ লেখক জেমস আস্তিল লিখে ফেলেন বেস্টসেলার বই দ্য গ্রেট তামাশা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।

তবে তামাশা দেখা খারাপ এবং বিশুদ্ধভাবে শুধু খেলার আনন্দই পেতে হবে, ব্যাপারটা তা–ও না। এই উর্বর ভূমিতে মানুষ শত শত বছর ধরে উদয়াস্ত পরিশ্রমের পর মেলা আর তামাশা করেই নিজেদের সজীব করত। এখনকার দিনে সেই সুযোগ কই? সে কারণেই মানুষ তামাশার সন্ধান করে। খুনসুটিও করে। প্রখ্যাত নৃতাত্ত্বিক বারবারা এহনরাইখ ড্যান্সিং ইন দ্য স্ট্রিটস বইয়ে মানুষের সামষ্টিক আনন্দের ইতিহাস তুলে ধরতে নাচকে প্রাধান্য দিলেও এই বদ্বীপে মেলা আর পালাপার্বণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এর বাইরে বিশ্বকাপের সময় সম্পূর্ণ ভিন্ন শিবিরের দুই দলকে সোচ্চার হতে দেখা যায়। কাতার বিশ্বকাপ তাদের জন্যও ভালো উত্তর
নিয়ে এসেছে।

একদল ইসলামের সঙ্গে ফুটবলের সংঘাত নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তবে কাতার তো বটেই, মরক্কো আর সৌদি আরবের মতো দেশের দারুণ পারফরম্যান্সও এর ভালো জবাব দেয়। ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্র তো বটেই, এমনকি আইসিসের মতো সংগঠনও ফুটবলকে দমিয়ে রাখার বদলে একে ব্যবহার করাই শ্রেয়, তা বুঝতে পেরেছে।

বাংলাদেশেও ফেসবুকে দেখা গেছে, ওয়াজ মাহফিলের দর্শক দল বেঁধে ফাইনাল খেলা দেখতে গেছে। কাতারে আয়োজিত বিশ্বকাপ ইসলাম নিয়ে পশ্চিমাদের নানা রকম ভুল ধারণাকে ভাঙতেও সাহায্য করেছে। ফুটবলের বন্ধন ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনের বদলে পরস্পরের সংস্কৃতিকে বোঝার সুযোগ করে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ফুটবল যেভাবে বিকশিত হচ্ছে, তাতে এই সুযোগ সামনে আরও বাড়বে।

আর ফুটবলকে জনতার আফিম ভাবা বিশেষজ্ঞরাও জবাব পান মরক্কোর খেলোয়াড়দের ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে উল্লাসে। এই বিশ্বকাপে ফিলিস্তিনিদের জন্য সরব ছিল দর্শক গ্যালারি। এমনকি ইসরায়েলের আগ্রাসনে নিহত ফুটবলার হয়ে উঠেছেন আন্দোলনের প্রতীক। বাংলাদেশে সভা–সমাবেশে দেখা গেছে বিশ্বকাপের পতাকাও। রাতভর একত্রে খেলা দেখার আয়োজনও ছিল। আর সম্প্রতি আরব বিশ্বে যত গণ–আন্দোলন তার বেশির ভাগের সূচনা ফুটবল আলট্রাদের হাত ধরে। আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মিসর এর জ্বলজ্বলে উদাহরণ। ফুটবলারদের কল্যাণে ইরানের আন্দোলন গতি পেয়েছে।

গ্যাব্রিয়েল কুনের সকার ভার্সাস স্টেট, ক্রিশ্চিয়ান কোলারের গোল আর ফ্র্যাংকলিন ফোয়েরের হাউ সকার এক্সপ্লেইন্স দ্য ওয়ার্ল্ড–এর মতো বইগুলোতে ফুটবলের সঙ্গে আন্দোলনের যোগসূত্রের ইতিহাস বিশদে পাওয়া যায়।

এই বিশ্বকাপ বাংলাদেশের সমাজপাঠ নিয়ে ভালো একটি দৃষ্টান্ত হয়ে এসেছে। ঘরোয়া ফুটবলের জোয়ার আনার জন্য আবারও একটা ধাক্কা হয়ে এসেছে। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের সমর্থনে যাঁরা ‘গলা ফাটান’, তাঁরা আবাহনী আর মোহামেডানের সঙ্গে সংযোগ কেন হারিয়ে ফেললেন, সেই প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমে অসহনীয় জীবন কাটানো ছাত্ররা, দমবন্ধ শহরে অতিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষ কেন সব ভুলে এক হয়ে যান—এর গভীর বিশ্লেষণেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিশ্বকাপ শেষ। এর আমেজও হয়তো শেষ হবে; কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো কাজে লাগানো আর প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা জরুরি হয়ে থাকবে আরও দীর্ঘদিন।