‘বিতর্কিত এক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় বসলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রকাশ শেষে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনের শুরুটা করা হয়েছে এভাবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মোটামুটি ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। তবে সমালোচকদের অনেকে বলছেন, এই সংখ্যাটা বাড়িয়ে বলা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল।
শুধু বিবিসিই নয়, বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে কয়েক দিন ধরে গুরুত্বসহকারের সংবাদ প্রকাশ করে আসছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। গতকাল রোববার নির্বাচন শেষে সেই ধারাবাহিকতায় এ নির্বাচন শিরোনাম হয়েছে আল-জাজিরা, সিএনএন ও ডয়চে ভেলের মতো শীর্ষস্থানীয় সব সংবাদমাধ্যমে।
এবারের নির্বাচনে ভোট হওয়া ২৯৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮টির বেসরকারি ফল পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২টি আসন। ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। আর বাকি তিনটি আসনে বিজয়ী অন্য দলগুলো।
নির্বাচনের পর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার শিরোনাম—‘ভোট পড়া নিয়ে বিতর্কের মধ্যে পঞ্চম মেয়াদে জয় পেলেন শেখ হাসিনা’। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন নির্বাচন বর্জন করেছিল প্রধান বিরোধী দল। ওই সময়েই বোঝা গিয়েছিল নির্বাচনের ফল কী হবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনেও তুলে ধরা হয়েছে, বিএনপির নির্বাচন বর্জন, নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা-নাশকতা, ভোটের নিম্ন হার এবং আওয়ামী লীগের বিজয়ের কথা। সিএনএন বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে নানা ঘটনা নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে। ‘বাংলাদেশের নির্বাচন: টানা চতুর্থ মেয়াদে জিতলেন শেখ হাসিনা’ শিরোনামে ওই ভিডিও চিত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন। তাঁর দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপির বর্জন এবং সহিংসতার মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের কথা। তাদের প্রতিবেদন বলছে, নির্বাচনে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন। তাঁদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। এর অর্থ আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বলতে গেলে গ্রহণযোগ্য কোনো বিরোধী দল থাকবে না।
নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের শিরোনাম—‘বিরোধী দলের বর্জন ও ভোট পড়ার হার ৪০ শতাংশ, নির্বাচনে জয় পেলেন শেখ হাসিনা’। অপর দিকে ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করেছে। বিএনপি নেতাদের দাবি, নির্বাচনে ভোটের নিম্ন হার থেকেই প্রমাণ হয় যে তাঁদের নির্বাচন বর্জন সফল হয়েছে।