বিশ্বজুড়েই নিরাপদ পানির সমস্যা রয়েছে। বিশ্বে প্রতি ৪ জন মানুষের একজন নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছে। দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ এখনো নিরাপদ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাড়িতে নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা পায় না ৬১ শতাংশ মানুষ। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, অপর্যাপ্ত বাজেট; সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার ত্রুটি; সামাজিক–সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা ও অসচেতনতার কারণে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের সুবিধা থেকে এখনো দূরে এই মানুষেরা। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
‘প্রয়োজনীয় পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করলেই সমাধান হবে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সংকট’ শিরোনামে রাজধানীর একটি হোটেলে সম্মেলনটির আয়োজন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই), ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সুইডেন দূতাবাস। সম্মেলনে বক্তারা বলেন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য উপাত্তের অভাব রয়েছে। এ খাতের সমস্যা সমাধানে চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশিষ্ট নাগরিক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বহুমুখী সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ৬ অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেশে নিরাপদ পানি পৌঁছানো গেছে ৫৯ শতাংশ মানুষের কাছে। দুর্গম এলাকা, গ্রামাঞ্চল ও শহরের বস্তি এলাকায় নিরাপদ পানি সহজে পাওয়া যায় না। পানিতে জীবাণু, আর্সেনিক ও লবণাক্ততা রয়েছে। এসডিজি লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নিরাপদ পানির জন্য এখন কমপক্ষে চার গুণ সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের ৯৮–৯৯ শতাংশ মানুষ সাধারণভাবে পানির সুবিধা পেলেও গুণগত মানসম্পন্ন নিরাপদ পানি এখনো সবার জন্য নিশ্চিত করা যায়নি। পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, এটা একটা সমস্যা। ঢাকায় ঘনবসতি বলে সমস্যা বেশি। পানি শোধনাগার যা আছে, তা যথেষ্ট নয়। তবে সরকার এসডিজি লক্ষ্য পূরণের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন–ব্যবস্থা বাড়াতে আগের চেয়ে বাজেট অনেক বাড়ানো হয়েছে।
খাওয়ার পানি নিয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন দুর্গম পাহাড়ি জনপদের মানুষ। এমন দাবি করে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে বলেন, নিরাপদ পানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনেক এলাকার পানি লবণাক্ত। কোনো এলাকার পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। পাহাড়ের মতো দুর্গম এলাকার নারীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন খাওয়ার পানি সংগ্রহে।
বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা বলেন, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এখনো নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন থেকে বঞ্চিত। এ সংকট সমাধানে এ বছর যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
বিশ্বের ২০০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছে। সম্মেলনে এ কথা বলেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের উপপ্রতিনিধি এমা ব্রিগহ্যাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পানির জন্য ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই সমন্বিতভাবে উদ্যোগের মাধ্যমে এ পানি ব্যবস্থাপনায় কাজ করা উচিত।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক (পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগ) মো. সারোয়ার বারী বলেন, প্রত্যেক মানুষের কাছে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন পৌঁছাতে অনেক নীতি ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সরবরাহ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কাজ চলছে।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক তানভীর আহমেদ, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের নির্বাহী পরিচালক এস এম এ রশিদ এবং আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান।