বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্ষণ মামলার বিচার এবং কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে চট্টগ্রামে নারীদের অবস্থান ও সমাবেশ। গতকাল রাত ৯টায় নগরের বিপ্লব উদ্যানে
বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্ষণ মামলার বিচার এবং কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে চট্টগ্রামে নারীদের অবস্থান ও সমাবেশ। গতকাল রাত ৯টায় নগরের বিপ্লব উদ্যানে

‘দুশ্চিন্তা ছাড়াই বাসার বাইরে বের হতে চাই’

উত্তর কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে দায়িত্বরত অবস্থায় এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা এবং বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরে সমাবেশ হয়েছে। আজ শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ২ নম্বর গেট এলাকার বিপ্লব উদ্যানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

‘মেইফুয়া অক্কল রাইত দহল গরো (মেয়েরা রাত দখল করো)’ স্লোগানে ওই সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এতে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা আয়ুশি, অর্ণব মিত্র, তানজিম আহমেদ প্রমুখ।

রাত আটটা থেকে শিক্ষার্থীরা বিপ্লব উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন। তাঁদের হাতে নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড ছিল। বক্তব্যের পাশাপাশি তাঁরা বিচার চেয়ে স্লোগান দেন। ছিল মোমবাতি প্রজ্বালন। এ ছাড়া ২ নম্বর গেট থেকে মিছিল নিয়ে ষোলশহর পর্যন্ত যান শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় ৩১ বছর বয়সী এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ভারতে বিক্ষোভ চলছে। চট্টগ্রাম থেকে ভারতের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, ভারতের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো যে কোথাও নারীদের নিরাপত্তা নেই। ঘরে-বাইরে নারীরা প্রতিনিয়ত নিগৃহীত হচ্ছেন। বাংলাদেশেও নারীদের ওপর অত্যাচার চলছে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। সড়কে বের হলে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনার বিচার হয় না। তাই প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনার বিচার করতে হবে। বর্তমান সরকারকে এই বিচার করতে হবে।

শিক্ষার্থী ফারহানা আয়ুশি বলেন, রাতের বেলা নারীরা নিরাপদে হাঁটতে পারেন না। নানা ধরনের ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। দেশে এর আগে তনু, মুনিয়াসহ অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু বিচার পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার। এসব ঘটনার বিচার হতে হবে।

সমাবেশের অন্যতম আয়োজক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নুজহাত তাবাসসুম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই বাসার বাইরে বের হতে চাই। গণপরিবহন ব্যবহার করতে চাই। রাতেও নিরাপদে কাজ করতে চাই। বর্তমান সরকারকে এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া দেশে এখন পর্যন্ত ধর্ষণের যেসব ঘটনার বিচার হয়নি, সেসব ঘটনায় দ্রুত বিচার কাজ শেষ করার দাবি জানাই।’

৯ আগস্ট উত্তর কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সভাকক্ষে শিক্ষানবিশ এক নারী চিকিৎসকের লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বলছে, ওই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সঞ্জয় রায় নামের কলকাতা পুলিশের এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআইকে।

শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে গত সাত দিন কলকাতাসহ রাজ্যজুড়ে চিকিৎসকদের আন্দোলন চলছে। প্রকৃত অপরাধীদের প্রকাশ্যে এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি উঠেছে। এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আজ সমাবেশ করলেন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা।