বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ নিজের পানের বরজের সামনে কৃষক অজিত পাল। গত বৃহস্পতিবার
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ নিজের পানের বরজের সামনে কৃষক অজিত পাল। গত বৃহস্পতিবার

বরজে এখনো বন্যার পানি, পচে গেছে পান

বাড়ির পাশের ১৮ শতক জমিতে পানের বরজ করেছিলেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের অজিত পাল। বন্যায় বরজের সব পান নষ্ট হয়ে গেছে। মরে পচে গেছে সব গাছ। বরজ থেকে বন্যার পানি এখনো নামেনি। নতুন করে বরজ তৈরি করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই অজিতের। কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন, তা ভেবে খুবই হতাশ তিনি।

শুধু অজিত পালই নন, গোবিন্দপুর গ্রামের ৫০টির বেশি পানের বরজ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবারের ভয়াবহ বন্যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের পথে বসার অবস্থা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, বন্যায় পানচাষিদের ক্ষতি হয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি।

পানচাষি অজিত পাল বলেন, তিনি বেসরকারি সংস্থা থেকে ‍ঋণ নিয়ে প্রায় এক বছর শ্রম-ঘাম দিয়ে পানের বরজটি দাঁড় করিয়েছিলেন। বরজের পানগুলো অনেকটা বিক্রির উপযোগী হয়ে এসেছিল। এরই মধ্যে শুরু হয় অতিবৃষ্টি। ভেবেছিলেন এক-দুই দিন পর বৃষ্টি কমে গেলে বরজের পানি সরাবেন। কিন্তু সেটি আর হয়নি। বৃষ্টির পানির সঙ্গে উজান থেকে ধেয়ে আসা পানি যোগ হয়ে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। বন্যায় তাঁর বরজে প্রায় কোমরসমান পানি জমে যায়। এতে বরজের সব পান পচে নষ্ট হয়ে গেছে।

অজিত আরও বলেন, পানের বরজের আয়েই তাঁর সংসার চলে। বরজের জন্য তাঁর খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকার বেশি। পান বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকার মতো পাওয়ার আশা ছিল তাঁর। বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন, সংসার কীভাবে চালাবেন, তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের গোবিন্দপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একমাত্র পাকা সড়কটির বেশির ভাগ অংশ এখনো পানির নিচে। কাঁচা সড়কগুলোরও একই অবস্থা। প্রতিটি বাড়ির উঠানে এখনো হাঁটুসমান পানি। কোনো কোনো বসতঘর থেকেও এখনো বন্যার পানি নামেনি। বন্যার পানিতে ডুবে আছে গ্রামের পানের বরজ, কৃষিজমি, মাছের ঘেরসহ সবকিছু। বরজের পানগাছগুলো এরই মধ্যে মরে পচে গেছে।

গোবিন্দপুর গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রণজিৎ পাল পানের বরজ করেছেন ১২ শতক জমিতে। তাঁর বরজের সব পান নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাথার ওপর ঋণের বোঝা। ধারদেনা করে পানের বরজ করেছি। এটি আদি পেশা। এবারের মতো ক্ষতি কখনো হয়নি। ৭০ বছর বয়সে এমন বন্যা আর দেখিনি।’

বর্তমান ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান মিরন প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় পুরো ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে তাঁর ওয়ার্ডটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০টির বেশি পানের বরজ। সব পানচাষির পথে বসার উপক্রম। তিনি আরও বলেন, এই এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা পান চাষ, মাছ চাষ ও কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। বন্যায় সবাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কেবল পানচাষিদের ক্ষতি দুই কোটি টাকার বেশি। সরকারের প্রতি পানচাষিদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার দাবি করেন তাঁরা।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, সেনবাগে পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি মাঠপর্যায় থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাঁকে জানাননি। এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন।