ঢাকা থেকে প্রথমবারের মতো সৈকতের শহর কক্সবাজারের উদ্দেশে ট্রেন ছেড়ে গেছে। শুক্রবার রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে এক হাজার ১০ জন যাত্রী নিয়ে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামের ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
প্রথম যাত্রাতেই ট্রেনটি ২৫ মিনিট দেরি করে ছেড়েছে। এর ব্যাখ্যায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, কক্সবাজার থেকে ট্রেন আসতে দেরি করেছে, তাই ছাড়তেও কিছুটা দেরি হয়েছে।
৪৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে সৈকতের শহর কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ১ হাজার ২০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ২০ বগির ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে সরাসরি এই রেলযাত্রায় যাত্রীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অনন্ত ১০ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের। যাত্রীরা জানান, তাঁরা কেউ কক্সবাজারের বাসিন্দা নন। ঐতিহাসিক এই রেলযাত্রার সাক্ষী হতেই তাঁরা ট্রেনে করে কক্সবাজার যাচ্ছেন।
প্রথমবারের মতো যাওয়া ট্রেনে করে স্ত্রীসহ কক্সবাজারে যাচ্ছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মীর আসাদুজ্জামান। এই দম্পতি শনিবার আবার একই ট্রেনে ঢাকায় ফিরবেন। মীর আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিহাসের সাক্ষী হতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। কক্সবাজার যাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা সেখানে থাকব। এর মধ্যে সৈকতে যাব, নতুন রেলওয়ে স্টেশন দেখব। এরপর শনিবার দুপুরে যখন এই ট্রেন কক্সবাজার থেকে ছাড়বে তখন আবার ঢাকায় চলে আসব।’
ইতিহাসের সাক্ষী হতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। কক্সবাজার যাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা সেখানে থাকব। এর মধ্যে সৈকতে যাব, নতুন রেলওয়ে স্টেশন দেখব। এরপর শনিবার দুপুরে যখন এই ট্রেন কক্সবাজার থেকে ছাড়বে তখন আবার ঢাকায় চলে আসব।ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী প্রথম ট্রেনের যাত্রী মীর আসাদুজ্জামান
৪৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে সৈকতের শহর কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ১ হাজার ২০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ২০ বগির ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’।
এ ট্রেনযাত্রার উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইতিমধ্যে আগামী ১০ দিনের টিকিট অগ্রিম কাটা হয়ে গেছে। সংকট নিরসনে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবার মান বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ ও এসি বার্থের ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। অপর দিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬, এসি সিটের ৪৬৬ ও এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন ছয় তলাবিশিষ্ট আইকনিক রেলস্টেশন। গত ১১ নভেম্বর দুপুরে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের আইকনিক রেলস্টেশনসহ ১০১ কিলোমিটারের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আইকনিক রেলস্টেশনে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুবিধা। দৈনিক ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আইকনিক রেলস্টেশনে আরও আছে ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্যকেন্দ্র, এটিএম বুথ ও প্রার্থনার স্থান।