ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নাম আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে এবার পাঁচটি কমিশনের সদস্যদের নামসহ আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনগুলো গঠন করে আজ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে কমিশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, কমিশনগুলো ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর পরামর্শমূলক মতবিনিময় করা হবে, যেখানে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এভাবেই সংস্কারকাঠামো চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আজ এটা বাদে বাকি কমিশনগুলোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে কমিশনের কাজ শুরুর করার কথা ছিল। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় তা শুরু করা যায়নি। এখন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারবে কমিশনগুলো।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে এই কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহেমদ, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, নির্বাচনবিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীম, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদ উর রহমান, শাসনপ্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন, ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস। এ ছাড়া একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকবেন এই কমিশনে, যার নাম ঘোষণা করা হয়নি।
সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেনের সঙ্গে এ কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল, সাবেক বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক শেখ সাজ্জাদ আলী ও মো. গোলাম রসুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, মানবাধিকারকর্মী এ এস এম নাসিরউদ্দিন এলান ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের সঙ্গে এ কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাজদার হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিম হোসেন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক (সুপন) ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে এ কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক মোস্তাক খান, ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর সঙ্গে এ কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক সচিব মোহাম্মদ তারেক ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব রিজওয়ান খায়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এ ফিরোজ আহমেদ ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।