আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

পুলিশ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনকে কারাগারে পাঠালেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বুধবার বিকেল পাঁচটায় তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

জুলাই-আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জসিম উদ্দিন প্রথম আসামি, যাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গত ১৩ আগস্ট মো. জসিম উদ্দিনকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আজ সকালে তাঁকে রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে মিরপুর এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন তিনি। তখন তিনি ডিএমপির মিরপুর বিভাগের ডিসি ছিলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আজ সাংবাদিকদের বলেন, মিরপুর বিভাগের অধীন সাতটি থানা রয়েছে। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে সেখানে শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এসব হত্যাকাণ্ডসহ সেখানে ছাত্র-জনতার ওপর পরিচালিত নির্মমতার ঘটনায় অন্তত ৩৫টি মামলার আসামি জসিম উদ্দিন মোল্লা। তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২৭ অক্টোবর ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। তাঁদের গ্রেপ্তার করে আগামী ২০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে জসিম উদ্দিন মোল্লাকে আজ গ্রেপ্তার করে হাজির করা হলো।

জুলাই-আগস্টে নির্মমতার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি যতই ক্ষমতাধর হোক তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ সময়ে অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন না, এমন কাউকে হয়রানি করা হবে না। তাঁদের কোনো ভয় নেই। আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। জুলাই-আগস্টে নির্মমতার শিকার এবং যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে।’

প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন কার্যালয়ে অনেক অভিযোগ জমা পড়ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর এখন পর্যন্ত ৭৫টির মতো অভিযোগ জমা পড়েছে। ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের পতন হয়।

সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ জন মন্ত্রী, ২ জন উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত ১ জন বিচারপতি ও সাবেক ১ জন সচিবসহ ১৪ জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁদের ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।