ঋদ্ধি প্রকাশনের নতুন কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা। সম্প্রতি মিরপুর ১১ নম্বরে
ঋদ্ধি প্রকাশনের নতুন কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা। সম্প্রতি মিরপুর ১১ নম্বরে

মিরপুরে ঋদ্ধি: বইসহ বহু কিছু 

নতুন হোক বা পুরোনো—যেটি পছন্দ, সেই বই নিয়ে যতক্ষণ ইচ্ছা পড়তে পারবেন। জায়গাটিও স্বাচ্ছন্দ্যময়। আরাম করে বসার জন্য আছে সোফা। যাঁরা একটু লেখালেখি করতে চান, তাঁদের জন্য চেয়ার-টেবিল। জ্ঞানপিপাসা ও চিত্তের ক্ষুধা মেটাতে যাঁরা লম্বা সময় ধরে পাঠে নিমগ্ন থাকবেন, তাঁদের উদরের ক্ষুধাতৃষ্ণা নিবারণের জন্যও রয়েছে উপাদেয় খাদ্য ও পানীয়র আনজাম। মনোরম পরিবেশ। সেখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থাও অত্যাধুনিক। সময় ও ঝামেলাসাশ্রয়ী। মেট্রোরেলে উঠে মিরপুর ১১ নম্বর স্টেশনে নেমে পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলে সড়কের দ্বিতীয় বাড়িটিই এই বইয়ের ভুবন। নাম ‘ঋদ্ধি প্রকাশন’।

ভবনটি পাঁচতলা। এর তিনটি তলা নিয়ে ঋদ্ধির প্রধান কার্যালয়। এখানে শুধু বই নিয়েই ঋদ্ধির কার্যক্রম সীমিত নয়; আরও আছে ফুল ও উপহারের দোকান, রেস্তোরাঁ, আর্ট গ্যালারি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থার মতো অনেক কিছু। বই ঘিরে এমন প্রতিষ্ঠান মিরপুরে এই প্রথম।

ঋদ্ধির প্রকাশক মাহবুবুল হাসান ফয়সালের প্রধান ব্যবসা রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা। তাঁদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলায়। মাহবুবুল হাসান বললেন, পারিবারিক উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছেন বই পড়ার অনুরাগ। শৈশব ও কৈশোর থেকেই তাঁর বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়া ও সংগ্রহের ঝোঁক। পারিবারিক সংগ্রহ তো ছিলই, এর বাইরে নিজেও ১৬ হাজারের মতো বই সংগ্রহ করেছেন। অধুনা বই পড়তে গিয়ে বেশ মনঃকষ্ট বোধ করছিলেন সম্পাদনাহীন নিম্নমানের পাণ্ডুলিপি ও প্রচুর বানান ভুল থাকায়। বলছিলেন, ‘অনেক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই কিনে পড়তে গিয়ে দেখি, অনেক বানান ভুল। ভালো করে প্রুফই সংশোধন করা হয়নি। বইয়ে বানান ভুল আমার একদমই অসহ্য লাগে।’ এ থেকেই নির্ভুল বানানে পাণ্ডুলিপি সুসম্পাদিত করে বই প্রকাশ করার ভাবনা আসে। লেখক ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা। তাঁদের উৎসাহ, পরামর্শ আর নিজের পরিকল্পনা মিলিয়ে ঋদ্ধি প্রকাশনের যাত্রা শুরু। দুর্লভ কিন্তু প্রাসঙ্গিক, প্রধানত এমন বই প্রকাশ করছে ঋদ্ধি। শুদ্ধ বানানে বই প্রকাশের পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে পাঠাভ্যাস ও শিল্পরুচি সৃষ্টির চেষ্টায় তাদের এ উদ্যোগ।

ঋদ্ধির প্রকাশনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে দুই বছর হলো। অমর একুশে বইমেলায় অংশ নিচ্ছে তারা। তবে মিরপুরে এই নতুন কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে সম্প্রতি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ এর উদ্বোধন করেন। সেদিন দেশের শিল্পসাহিত্য অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও গ্রন্থানুরাগীদের সমাগমে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল পরিবেশ। তার পর থেকে গ্রন্থানুরাগীদের যাতায়াতে প্রাণবন্ত হয়ে আছে ঋদ্ধি প্রকাশন।

ঘুরে দেখা গেল, ঋদ্ধি প্রকাশনের কার্যালয়ের নিচের তলায় ফুল ও উপহারসামগ্রীর দোকান আর রেস্তোরাঁ। এখানে সুলভে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রান্না করা খাবার পাওয়া যায়।

দেশি-বিদেশি বইয়ের বিপুল সমারোহ প্রথম তলাজুড়ে। এখানে আছে পড়ার বই, কেনার বই, দুর্লভ বই ও পত্রপত্রিকার আর্কাইভ। অনুমতি নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক-গবেষকেরা বিনা মূল্যে আর্কাইভ ব্যবহার করতে পারবেন। রবীন্দ্র-নজরুলের বড় আকারের প্রতিকৃতি, সুদৃশ্য আসবাব আর আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা দিয়ে পাঠাগারটি সাজানো। এক পাশে আলাদা করে শিশু কর্নার। বাংলা–ইংরেজির সেরা শিশুতোষ বই আর খেলনায় বর্ণাঢ্য করে সাজানো। খেলতে খেলতে তারা যেন পড়তেও আগ্রহী হয়, সেই ব্যবস্থা।

আর্ট গ্যালারি দ্বিতীয় তলায় প্রদর্শনী ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে উন্মাদ পত্রিকার আয়োজনে একটি কার্টুন প্রদর্শনীও হয়েছে। উন্মাদ সম্পাদক আহসান হাবিব বলেন, মিরপুরে লোকবসতি অনেক; কিন্তু ভালো মানের বইয়ের দোকান ও আর্ট গ্যালারি ছিল না। ঋদ্ধি সেই অভাব পূরণ করেছে। সবারই প্রত্যাশা, পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা ও শিল্পবোধ সৃষ্টিতে প্রেরণা দিতে ঋদ্ধির এই কেন্দ্র বিশেষ ভূমিকা রাখবে।