আড়াই বছরের শিশু মাশরুরা জাহান তার নানি সাজেদা বেগমের কোলে বসে জুস খাচ্ছিল। তার বাবা যে আর নেই, ছোট্ট শিশুটির সেটা বোঝার বয়স হয়নি। এখনো সে হয়তো অপেক্ষায় আছে, তার বাবা অফিস শেষে তাকে প্রতিদিনের মতো ফোন করবেন। আর সপ্তাহান্তে আদরের মেয়ের কাছে ফিরবেন আব্বু। শিশু মাশরুরার আব্বু হলেন সাইফুল ইসলাম আলিফ।
সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হয়েছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় তাঁকে হত্যা করা হয়। তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
আইনজীবী সাইফুলের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতী এলাকার ফারিঙ্গা গ্রামে। পাঁচ ভাইয়ের সবাই লোহাগাড়ার আমিরাবাদ স্টেশন এলাকার টেন্ডলপাড়ায় নিজস্ব একটা দোতলা বাড়িতে বসবাস করেন। আজ বুধবার সকালে সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম চলছে।
সাইফুল ইসলামের স্ত্রী ইশরাত জাহান ঘটনার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সাইফুলের মা হোসনে আরা বেগম থেমে থেমে বিলাপ করছিলেন। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে চতুর্থ সাইফুল। মেয়েজামাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ওই বাড়িতে ছুটে আসেন সাইফুলের শাশুড়ি সাজেদা বেগম।
এখন নানি সাজেদার কাছে আছে শিশু মাশরুরা জাহান। সবাই কান্নাকাটি করছে। এসবে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই মেয়েটির। সাজেদা বেগম বলেন, মেয়ে এখনো বুঝতে পারছে না, তার বাবা মারা গেছেন। কোর্টে যাওয়ার আগে গতকাল সকালে মেয়ের সঙ্গে তার আব্বুর শেষ কথা হয়। বিকেলে আদালত থেকে ফিরে আবার ফোন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরপর মৃত্যুর খবর আসে।
বাবার খুব আদরের মেয়ে মাশরুরা জাহান। প্রতিদিন আদালতে যাওয়ার সময় সাইফুল ফোনে কথা বলতেন স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে। বিকেলে আদালত থেকে ফিরে আবার কথা বলতেন। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার বাড়ি ফিরতেন মেয়ের টানে। মেয়ের নানা বায়না ছিল আব্বুর কাছে। তার সেসব বায়না আর পূরণ হবে না।
সাইফুলের ফুফাতো ভাই আতিকুর রহমান বলেন, সাইফুল খুব ভালো ছেলে ছিলেন। এলাকায় খুব নাম ছিল তাঁর। নানা সামাজিক কাজে তাঁকে পাওয়া যেত।
গতকাল বিকেলে আদালত এলাকায় গুরুতর আহত হওয়ার পর সাইফুলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় হাসপাতালে সাইফুলের বোন জান্নাত আরাসহ স্বজনেরা ভিড় করেন। মৃত্যুর খবর শুনে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আজ ময়নাতদন্ত শেষে সাইফুলের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সকাল নয়টায় মরদেহ মর্গ থেকে নেওয়া হয়। এরপর আদালত চত্বর ও জমিউতুল ফালাহা মাঠে দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ও চুনতী গ্রামে দুই দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করার কথা রয়েছে।