আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ১২টি বিদেশি মিশন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল, তাতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করা হয়েছে বলে মনে করছে সরকার। আজ বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৩টি মিশনের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে সরকারের এই অবস্থান তুলে ধরা হয়। পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতাবর্জিত আচরণ কেবলই পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রতি ভবিষ্যতে এমন ‘অকূটনৈতিক’ আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
১৭ জুলাই ঢাকা–১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালে বনানীর একটি কেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। কেন্দ্রের বাইরে রাস্তায় ফেলে তাঁকে পিটিয়েছিল নৌকার ব্যাজধারীরা।
অনাকাঙ্ক্ষিত ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে’ ১৩টি দূতাবাস গণমাধ্যমে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ দুপুরে তাদের রাষ্ট্রদূতদের আমরা ডেকেছিলাম। তাঁদের কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণে আমরা আমাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছি।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা বলেছি যে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা দিয়ে সারা দিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।’ এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, হিরো আলম ওই দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে অবাধে ঘুরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভোট শেষ হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হননি বা কোনো অভিযোগ করেননি। অন্য প্রার্থীরাও কোনো ধরনের সহিংসতা বা অন্য কোনো অনিয়মের অভিযোগ করেননি।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তাই শুধু একটি কেন্দ্রের শেষ মুহূর্তের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে গুটিকয় কূটনীতিক যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা কখনোই সারা দিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলিত করে না। দ্রুত একটি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তাঁরা তাঁদের মূল্যায়নটির বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি।’
হিরো আলমের ওপর হামলার বিষয়ে জানার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন ও সরকার দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ১৯ জুলাই কূটনীতিকেরা যৌথ বিবৃতি দেওয়ার অনেক আগেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৮ জুলাই তা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল। অথচ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও এই কূটনীতিকেরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যা ‘অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়’।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যে দ্রুততা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা তাঁরা করেছেন, সেই গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে কিন্তু তাঁরা সরকারের গৃহীত তাৎক্ষণিক ও ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতিটির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়।’
যৌথ বিবৃতিটি ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে যথা সময়ের অনেক আগেই তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আশা করি, আমাদের আজকের আলোচনার পর তাঁরা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকবেন।’
বিদেশি মিশনপ্রধানদের কূটনৈতিক আচরণবিধি–সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দিয়ে গঠনমূলক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহরিয়ার আলম।
হঠাৎ করে সরকার রাষ্ট্রদূতদের ডাকল কেন—এ প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমি দুয়েকটা উদাহরণ দিলাম, একসঙ্গে কয়েকটি রাষ্ট্র খুব বেশি সময় এমনটা করেনি। এখানে মৌলিক কিছু দুর্বলতা আছে গণমাধ্যমে পাঠানো তাদের বিবৃতিতে। এ বিষয়গুলো আজ আমি তুলে ধরেছি। (এ ধরনের বিবৃতি) যখন আসবে, আমরা সেটাকে তাৎক্ষণিকভাবে করব (প্রতিক্রিয়া জানাব), এর আগেও আমরা করেছি।’
বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত না হন, সেই আহ্বান থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।