ভৌগোলিকভাবে আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্বটা ১৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি। কিন্তু আলবিসেলেস্তের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসায় এ দূরত্বকে বিস্তর মনে হয় না।
কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় আর্জেন্টিনা দলকে নিয়ে বাংলাদেশের উন্মাদনা লাতিন আমেরিকার দেশটিকে চমকে দিয়েছে। এ উন্মাদনা আর্জেন্টিনা তো বটেই, সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে।
আর্জেন্টিনার মানুষও এখন বাংলাদেশকে আপন ভাবছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও গভীর করতে বিশ্বকাপজয়ী দেশটি ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় দূতাবাস চালু করতে যাচ্ছে।
ঢাকায় দূতাবাসের উদ্বোধন করতে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসছেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি দূতাবাস উদ্বোধন করা হবে।
বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত আর্জেন্টিনা দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্কো সেনিলিয়ানির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ সোমবার ঢাকায় আসছেন। ফ্রাঙ্কো গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো তিন দিনের সফরে ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসবেন। সফরকালে দূতাবাস উদ্বোধনের পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জয়ের পর অভিনন্দন জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজকে চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অভিনন্দনবার্তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো।
চিঠিতে আলবার্তো বলেন, ২০২৩ সালে ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস স্থাপনের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণ ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির দৃঢ়বন্ধনে আবদ্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালুর বিষয়টি মূলত সামনে আসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি টুইটকে কেন্দ্র করে।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো এক টুইটে লেখেন, ঢাকায় ১৯৭৮ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁর দেশের দূতাবাস পুনরায় চালুর বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের জোরালো সমর্থন দীর্ঘদিনের। তবে সদ্য সমাপ্ত কাতার বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনা দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আবেগ বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ে। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার খেলার আগে-পরে বাংলাদেশের সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বকাপে মেক্সিকোর বিপক্ষে মেসির গোলের পর উল্লাসরত বাংলাদেশি সমর্থকদের একটি ভিডিও ফিফার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করার পর তা বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে। ভিডিওটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আর্জেন্টিনার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঘটনাটি ফলাও করে প্রচার করা হয়।
পরে আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের টুইটারে বলা হয়, ‘আমাদের দলকে সমর্থন করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ! ওরা (বাংলাদেশিরা) আমাদের মতোই পাগল!’
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মনে করেন, ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধন দৃঢ় হবে। দূতাবাস চালুর ফলে আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্জেন্টিনার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ লাতিন আমেরিকার অভিন্ন বাজার মারকোসুরে প্রবেশেধাকিরার উদ্যোগ নিতে পারে। দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সয়াবিন উৎপাদনকারী দেশ আর্জেন্টিনা। সম্পর্কের নতুন প্রেক্ষাপটে দেশটি থেকে বাংলাদেশের সয়াবিন তেল আমদানি সহজতর হতে পারে। পাশাপাশি চিনি আমদানির সুবিধা বাড়বে।