সড়ক পরিবহন আইনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ১৬টি কাজের কথা বলা আছে। এর মধ্যে যানবাহন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফিটনেস সনদ দেওয়া, যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে চালকের লাইসেন্স সরবরাহ এবং প্রয়োজনমতো যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়া—এ তিন কাজের সঙ্গে নিরাপদ সড়কের বিষয়টি সরাসরি জড়িত।
কিন্তু এ তিন কাজই যথাযথভাবে করার সক্ষমতা নেই বিআরটিএর। ফলে দিন দিন সড়ক অনিরাপদ হচ্ছে। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ।
বিশ্বের অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ওপরের দিকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।
পুলিশের দেওয়া তথ্য ধরে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই)। ১৯৯৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার পেছনে চালক দায়ী। এতেই পরিষ্কার, সড়কে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় মোটরযানের চালকের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিআরটিএ দক্ষ চালক তৈরি করতে পারছে না। যথাযথ পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স দেওয়ার মতো অবকাঠামো ও লোকবল নেই প্রতিষ্ঠানটির। ফলে যেনতেনভাবে পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। তা–ও প্রয়োজনের তুলনায় কম।
মোটরযানের চালকদের দক্ষতা যাচাইয়ে আন্তর্জাতিক কিছু মানদণ্ড আছে। এর জন্য ড্রাইভিং ট্র্যাক, র্যাম্প, ড্রাইভিং সিমুলেটর, কম্পিউটারাইজড হলরুম জরুরি। নতুন চালকদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত প্রশিক্ষণ ও সেমিনারকক্ষও প্রয়োজন।
চালকের লাইসেন্স দেওয়ার পরীক্ষা এবং নথিপত্র তৈরির কাজটি করে থাকেন মোটরযান পরিদর্শকেরা। এ পদে সারা দেশে লোকবল আছে ১২৫ জন। অথচ প্রতিবছর লাইসেন্সের আবেদন পড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ।
বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে দিনে ৬০০ লাইসেন্সের আবেদন জমা হয়। যানবাহন চালিয়ে দেখাতে লাইসেন্সপ্রার্থীকে ৩০ মিনিট সময় দিলে ৩০০ ঘণ্টা দরকার। চারজন মোটরযান পরিদর্শক থাকলেও প্রত্যেকের ৭৫ ঘণ্টা দরকার। বাস্তবে এর কোনোটিই হয় না।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিআরটিএতে সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু খারাপ লোকও আছেন। এরপরও এখন সেবা বেড়েছে। দক্ষ চালক তৈরি এবং ফিটনেস সনদ প্রদানে যথাযথ আইন অনুসরণে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।