ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে শ্রমজীবী মানুষরা
ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে শ্রমজীবী মানুষরা

‘কাম মিললেও অনেক সময় যাওন যায় না, ঠান্ডা লাগি যায়’

ঘন কুয়াশায় মোড়া মৌলভীবাজারের পথঘাট, শহর ও শহরতলির গ্রাম। অল্প কয়েক হাত দূরের কিছুও স্পষ্ট দেখা যায় না। শীতে জবুথবু সবাই। সকাল হলেও কুয়াশায় সূর্য ঢেকে আছে। এ রকম মুহূর্তে নানা দিক থেকে আসা মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে শহরের একটি ব্যস্ততম স্থানে। তাঁরা সবাই শ্রমজীবী মানুষ।

আজ রোববার সকালে মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা চত্বরে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়।

এ রকম ঠান্ডায়ও ঘর থেকে বের হয়ে এসেছেন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের হরেন্দ্র দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা তো বেশি। কিন্তু কিতা করমু (কী করব)। ঠান্ডা থাকি তো পেটের খিদা বেশি।’

কুয়াশা ও ঠান্ডার মধ্যে অনেক শ্রমজীবী নারী-পুরুষ কাজের খোঁজে পথে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের কারও আগে থেকেই কাজ ঠিক করা আছে। তাঁরা তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে ছুটছেন। অনেকের কাজ নির্দিষ্ট নেই।

তাঁরা রোজ চুক্তিতে কাজে যাবেন। এই ‘ছুটা’ শ্রমিকদের গন্তব্য হচ্ছে মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা চত্বর। এই স্থান প্রতিদিন সকালবেলা অস্থায়ী শ্রমিকের হাট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। যেসব শ্রমিক কাজে যেতে আগ্রহী, তাঁরা টুকরি-কোদাল নিয়ে এখানে ছুটে আসেন। যাঁদের কাজের লোক দরকার, তাঁরা এখানে এসে প্রয়োজনমতো লোক নিয়ে যান। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভাসমান শ্রমিকেরা এখানে কাজের উদ্দেশ্যে ১২ মাস ভিড় করে থাকেন।

আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে চৌমোহনা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ চৌমোহনা চত্বরে জড়ো হয়েছেন। কেউ টুকরি-কোদাল ফুটপাতে, দোকানের বারান্দায় রেখে পাশেই শীতে চাদর, গামছায় মাথা মুড়ি দিয়ে জবুথবু বসে আছেন।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের কুদ্দুছ মিয়া এক মাস ধরে কাজের খোঁজে মৌলভীবাজারে। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহখানেক ধরে বেশি ঠান্ডা পড়ছে। ঘর তনে (থেকে) ঠান্ডার লাগি (জন্য) বাইর অওয়া (বের হওয়া) যায় না। চাউলের কেজি ৬০ টাকা। কোনো রকম গরিবানা ছুরত (রকম) ডাইল-ভাত খাইয়া বাঁচিয়া আছি। কাম না করলে তো কেউ দিত না।’

চুনারুঘাটের কলমদর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুয়া (কুয়াশা) মাথার মধ্যে গাথি (গেঁথে) যায়। অনেক সময় কাম মিলে না। কাম মিললেও অনেক সময় যাওন (যাওয়া) যায় না, ঠান্ডা লাগি যায়।’

এই শ্রমিকেরা বলেন, এখান থেকে তাঁরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে সারা দিনের জন্য কাজে গিয়ে থাকেন। এ জন্য সকাল ছয়টার দিকে তাঁদের ঘর থেকে বের হতে হয়। এই ঠান্ডার মধ্যে কাজে আসতে অনেক কষ্ট। কিন্তু কাজ বাদ দেওয়ার তেমন সুযোগ নেই। এমনিতে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিনের বেশি কাজ মিলে না। বাকি দিনগুলোতে বসে থাকতে হয়। তখন জমানো টাকা ভেঙে, নয়তো ধার করে খেতে হয়।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বিপ্লব দাস আজ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীমঙ্গলে সকাল ৯টায় ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলেনি। তখনো কুয়াশা কাটেনি।