পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী হাসান চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা করছেন।
মেহেদীর ভাষ্য, একসময় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন। এ কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রোষানলে পড়েছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে ফরমায়েশি প্রতিবেদন দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে অপসারণের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু প্রথম আলোকে বলেন, মেহেদীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি স্বাধীনভাবে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। মেহেদীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে কমিটি। সে অনুযায়ী এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরিচ্যুতির আশঙ্কায় মেহেদী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন অকার্যকর ও রহিত করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। পরে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির নেতারাও মনে করছেন, মেহেদীর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘একপেশে’ আচরণ করছে।
মেহেদী নিজেও শিক্ষক সমিতির একজন নির্বাচিত সদস্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের একাংশের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। শিক্ষক সমিতিকে লেখা চিঠির বিষয়ে মেহেদী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। এ জন্য তিনি শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে প্রতিকার চেয়েছেন।
২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। গত বছর এ-সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুরোনো বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। ঘটনাটি নিয়ে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পোস্টার টানানো হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
পোস্টার টানানোর ঘটনায় মেহেদীকে ‘অভিযুক্ত’ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ এনে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়। এই তদন্ত কমিটি গত মাসে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
মেহেদী হাসানের ভাষ্য, সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করেই ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ তুলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এখন ফরমায়েশির প্রতিবেদনের আলোকে তাঁকে কেন চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে না, সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে একটি চিঠি দেন মেহেদী। চিঠিতে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি তাঁকে তিনটি বিষয়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এগুলো হলো আপত্তিকর পোস্টার ছাপিয়ে বিতরণ, পদোন্নতির (পর্যায়োন্নয়ন) শর্ত পূরণ না করা ও সাময়িক বরখাস্তের আদেশকে জুলুম-নির্যাতন-হঠকারী হিসেবে উল্লেখ করা। তদন্ত কমিটি ও তদন্তপ্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ, প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁর লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য, নথিপত্র, এমনকি আদালতের আদেশকেও আমলে নেওয়া হয়নি। বিচারিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে এই তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট, ফরমায়েশি।
তদন্ত কমিটির বিষয়ে শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেন মেহেদী। এতে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ লেনদেন ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। অথচ এই বিভাগেরই দুজন শিক্ষককে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়। তাঁকে (মেহেদী) সাময়িক বরখাস্ত করা হয় গত বছরের ২৮ মে। কিন্তু তাঁর ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় আরও পরে—গত বছরের ৬ আগস্ট। এত দিন পরে এসে তদন্ত কমিটি গঠন করাকে ত্রুটিপূর্ণ বলছেন মেহেদী।
এ ছাড়া তদন্তে দীর্ঘসূত্রতারও অভিযোগ করেছেন মেহেদী। শিক্ষক সমিতির কাছে লেখা চিঠিতে তিনি বলেছেন, কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্তকাজ পরিচালনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস পরে অভিযুক্তের (মেহেদী) প্রথম সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আবার তদন্তকাজ শেষে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস পর গত ৮ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
বিভিন্ন অভিযোগের কথা উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতিকে দেওয়া চিঠিতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন রহিতে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন মেহেদী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ ঈদুল আজহার আগে প্রথম আলোকে বলেন, মেহেদীর সঙ্গে যেটা করা হচ্ছে, সেটা একপেশে। এ জন্য মেহেদীর আবেদন পাওয়ার পর সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি চলায় তখন পর্যন্ত জবাব পাওয়া যায়নি।