জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এর মধ্যেই কয়েক বছর ধরে অনেক দেশের অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়লে তৈরি হয় নতুন সংকট। গত বছর শুরু হওয়া রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছে।
এই চার সংকটে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো কৃষি ও খাদ্যশস্য নিয়ে পড়েছে নানা সংকটে। এসব সংকট সমাধানে খাদ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং খাদ্য কূটনীতিতে জোর দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খাদ্যবিষয়ক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) মহাপরিচালক জোহান সুইনেন এসব কথা বলেছেন।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুইনেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সেখানেই এসব কথা বলেছেন তিনি।
বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী সাত দেশের জোট বিসমটেকের (বহুপক্ষীয় কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বঙ্গোপসাগরীয় উদ্যোগ) সঙ্গে ইফপ্রির তিনটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইফপ্রির মহাপরিচালক ঢাকা সফর করছেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি সমঝোতা স্মারকে সই করেন। এ সময় বিসমেটকের মহাসচিব এইচ ই তেনজিন লেকফেল এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
জোহান সুইনেন বলেন, বিশ্বে গমের দাম বেড়েছে এটা যেমন সত্য আবার এই সংকটের মধ্যে রাশিয়া ও ভারত গমের উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়িয়েছে। বিশেষ করে ভারতের কাছে রপ্তানিযোগ্য প্রায় ৮০ লাখ টন গম আছে। ওই গম রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের কাছে অগ্রাধিকার পেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
গম নিয়ে আলোচনায় ইফপ্রির মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের মানুষের দ্বিতীয় প্রধান খাবার গম। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ গম আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এতে করে চালের ওপর চাপ বাড়ছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। আলু, সবজি ও ফলের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে। এসব ফসল মাঠ থেকে তোলার পরই এর বড় একটা অংশ নষ্ট হয়। ফসল যাতে নষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত যেন বিনিয়োগে এগিয়ে আসে সেই চেষ্টা চালাতে হবে।
ইফপ্রির পরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) শহিদুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশসহ বঙ্গোপসাগর–তীরবর্তী দেশগুলোর মধ্যে খাদ্য ও কৃষি নিয়ে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের অনেক সুযোগ আছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এসব সংকটের মধ্যে পরস্পরের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। যেমন বাংলাদেশ খাদ্যপণ্য কিনতে বিসমটেকের সদস্যদেশ ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে খাদ্য কূটনীতির মাধ্যমে চাল ও গম আমদানির আলোচনা করতে পারে।