পঞ্চগড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগে মহাসড়ক অবরোধ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। আজ মঙ্গলবার পঞ্চগড় শহরের ধাক্কামারা এলাকায় পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে
পঞ্চগড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগে মহাসড়ক অবরোধ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। আজ মঙ্গলবার পঞ্চগড় শহরের ধাক্কামারা এলাকায় পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে

পঞ্চগড়ে শ্রমিকনেতাকে মারধরের অভিযোগে মহাসড়ক অবরোধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

পঞ্চগড় জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগে সাড়ে তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে শুরু করে রাত আটটা পর্যন্ত টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। এতে জেলা শহরের ধাক্কামারা ও মিঠাপুকুর এলাকার তেঁতুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে কয়েক শ যানবাহন আটকে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির নেতাদের বৈঠক শেষে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।

অবরোধকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরে দিনাজপুর থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস চালিয়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে আসছিলেন পঞ্চগড় জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সড়ক সম্পাদক মো. রোকনুজ্জামান। এ সময় বোদা উপজেলা শহরে উপজেলা থ্রি-হুইলার ও সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে অটোরিকশাচালকেরা রোকনুজ্জামানকে মারধর করেন। তিনি পঞ্চগড় জেলা শহরে এসে বিষয়টি সংগঠনের নেতাদের জানান। এরপর এই ঘটনার বিচারের দাবিতে শহরের ধাক্কামারা গোলচত্বর ও মিঠাপুকুর এলাকার তেঁতুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে সড়কের ওপর বাস-মিনিবাসগুলো আড়াআড়ি রেখে চলাচল বন্ধ করে দেন। তাঁরা জেলার চারটি উপজেলায়ও গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন।

বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত জেলা শহরের ধাক্কামারা, মিঠাপুকুর, মিলগেট, ব্যারিস্টার বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে সড়কে কয়েক শ যানবাহন আটকে পড়েছে। এ সময় বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল শুরু করেন। অনেকেই আবার অবরোধের স্থানগুলো পায়ে হেঁটে পার হয়ে অটোরিকশাযোগে গন্তব্যে যাচ্ছেন। অবরোধ চলাকালে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর বৃষ্টি শুরু হলে মানুষের ভোগান্তির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।

পঞ্চগড় জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বদরুল আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বোদা শহরে আমাদের বাসগুলো যেখানে থামানো হয়, সেখানে অটোরিকশাচালকেরা দাঁড়াতে দেবেন না। এটা নিয়ে চালকেরা আন্দোলন করছিলেন। প্রায় প্রতিদিনই তাঁরা আমাদের শ্রমিকদের হুমকি দিচ্ছেন। আজ আমাদের সড়ক সম্পাদক রোকনুজ্জামান দিনাজপুর থেকে গাড়ি (বাস) নিয়ে বোদায় আসেন। এ সময় তাঁরা সেখানে দাঁড়াতে বাধা দিলে সংগঠনের নেতা হিসেবে তিনি কথা বলতে গেলে তাঁকে ধরে বেধড়ক মারধর করেন। এ জন্য শ্রমিকেরা গাড়ি সড়কে রেখে কাজ বন্ধ করে দেন।’

বদরুল আলম আরও বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় সব দাবি জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় বোদা থানায় মামলা করা হবে। যাঁরা রোকনুজ্জামানকে মারধর করেছেন, তাঁদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, তিন চাকার যান মহাসড়কে বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। আগামীকাল বুধবার বিকেল চারটার মধ্যে দাবি মানা না হলে আবারও কর্মসূচিতে যাবেন তাঁরা।

বোদা উপজেলা থ্রি-হুইলার সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোকনুজ্জামানকে মারধর করা হয়নি। মূলত আমাদের একটি পাগলু (তিন চাকার যান) পঞ্চগড় বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির লোকজন আটকে রেখেছিলেন। সেটা নিয়ে বোদা শহরে আমাদের আন্দোলন চলছিল। এ সময় রোকনুজ্জামান দিনাজপুর থেকে গাড়ি (বাস) নিয়ে আসছিলেন। বোদায় এসে তিনিও মালিক সমিতির পক্ষ নিয়ে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় আমাদের শ্রমিকদের সঙ্গে রোকনুজ্জামানের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে তিনি গাড়ি চালিয়ে পঞ্চগড়ে চলে যান। পরে শুনি তাঁরা পঞ্চগড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।’

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাস মালিক সমিতি ও অটোরিকশাচালকদের মধ্যে সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। তবে সড়ক অবরোধের কারণে মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। এটা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে শ্রমিকনেতাকে মারধরের যে বিষয়টি এসেছে, সেটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।