সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এক মানববন্ধনে বক্তারা এ কথা বলেন। ‘রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের’ দাবিতে ওই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একই দাবিতে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়ও এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঢাকার মানববন্ধনে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। এখন একটি সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর আগে ১৯৯১ সালেও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিন জোটের রূপরেখা ছিনতাই হয়ে যায়। এবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতনের ফলে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেটা যেন ছিনতাই হয়ে না যায়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই সরকারের ব্যর্থতা মানে সবার ব্যর্থতা। অন্তর্বর্তী সরকারকে একসঙ্গে দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, বিগত সময়ে যাঁরাই দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, হত্যা ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিচার করা। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজনের নির্বাহী সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অভূতপূর্ব কাজ করেছে। তারা জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি, এটি ইতিবাচক। তারা এই ভূমিকা না নিলে সরকারের পতন এত সহজে হতো না। কোনো কোনো বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে ছাত্র-জনতা যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে, এ জন্য তিনি তাদের অভিনন্দন জানান। ছাত্রসমাজের আকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে নাগরিক সমাজকে সেই স্বপ্নের জাল বুনে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়েই ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সব কালোটাকা জব্দ করতে হবে। বিদেশে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে এনে সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে। রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করতে হবে, যাতে খুনি হাসিনার মতো করে ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার মতো রাষ্ট্রকাঠামো তৈরি না হয়। জবাবদিহিমূলক, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সুজনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে আছে হত্যা ও সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুততার সঙ্গে বিচারের আওতায় আনা; আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে সহায়তা করা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া; আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা; রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা; সংবিধানের গণতান্ত্রিক চেতনাপরিপন্থী ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করা; জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণমুক্ত করা; আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে সুজনের সহসম্পাদক জাকির হোসেন, হেল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি খন্দকার শহীদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।