অভিযানেও থামেনি প্যারাবন কাটা 

বন বিভাগ তিন দফা অভিযান চালানোর পরও এরই মধ্যে দখল হয়েছে প্যারাবনের ২৫০ একর জায়গা, কাটা পড়েছে ৮ হাজার বাইনগাছ।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে চিংড়িঘের করতে কাটা হয়েছে বন বিভাগের সৃজিত প্যারাবনের বাইনগাছ। গত মঙ্গলবার বিকেলে হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজীর পাড়ায়

কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের কলাগাজির পাড়া এলাকায় প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের তৈরি করা হচ্ছে। বন বিভাগ কয়েক দফায় অভিযান চালানোর পরও প্যারাবনের গাছ কাটা থামেনি। গত দুই সপ্তাহে ওই এলাকায় প্যারাবনের প্রায় ২৫০ একর জায়গা দখল করে চিংড়িঘেরের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কাটা হয়েছে প্যারাবনের অন্তত আট হাজার বাইনগাছ।

বন বিভাগ দিনের বেলায় পাহারা দেয়। কিন্তু গাছ কাটা হয় রাতে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় রাতে পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। এই সময়টাতে প্যারাবনের গাছ কাটা হচ্ছে।

এলাকাবাসী ও বন বিভাগ সূত্র জানায়, মো. এরশাদ নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে প্যারাবন দখল করা হচ্ছে। তিনি পার্শ্ববর্তী কুতুবদিয়া উপজেলার বাসিন্দা। প্যারাবন উজাড়ে তাঁকে সহায়তা করছেন মো. নাজিম উদ্দিন, আবদুল মতিন ও শাহাদাত হোসেন নামের স্থানীয় তিন ব্যক্তি। শতাধিক শ্রমিক নিয়ে দিনদুপুরে তাঁরা প্যারাবন কেটে খননযন্ত্রের (এক্সকাভেটর) মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ শুরু করেন। তবে বন বিভাগের অভিযানের মুখে পড়ে এখন রাতের অন্ধকারে চিংড়িঘের নির্মাণের কাজ করছেন।

উপকূল রক্ষায় ১৯৯৮ থেকে শুরু হয় প্যারাবন সৃজন।

স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে চলছে দখল।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে তিনটি। 

বন বিভাগের ক্ষতি প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্যারাবন নিধনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা করছে। 

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্যারাবন উজাড়ের খবর পেয়ে চলতি মাসে অন্তত তিন দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। ১০, ১২ ও ১৪ জানুয়ারি পরিচালিত অভিযানে তিন দফায় চিংড়িঘেরের জন্য নির্মাণ করা বাঁধ কেটে দেওয়া হলেও দখলকারীরা আবার বনকর্মীদের অগোচরে বাঁধ নির্মাণ করেছেন। শুরুতে দুই হাজার গাছ কাটা হলেও অভিযানের পর কাটা হয়েছে আরও প্রায় ছয় হাজার গাছ। 

চিংড়িঘেরের জন্য প্যারাবন দখলের ঘটনায় এরই মধ্যে আদালতে দুটি এবং মহেশখালী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে বলেও জানান বন কর্মকর্তারা। মামলায় এরশাদসহ চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলকে রক্ষার লক্ষ্যে ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বন বিভাগের পক্ষ থেকে হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজিরপাড়ার বগাচতর চিংড়িঘেরের পশ্চিমে অন্তত ৩০ একর বনের জমিতে প্যারাবন সৃজন করা হয়। পরে আশপাশের এলাকায় চর জেগে উঠলে সেখানেও পর্যায়ক্রমে বাগান সৃজন করা হয়েছে।

বন বিভাগের স্থানীয় ঝাপুয়ার বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাবুবুল হক বলেন, মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চিংড়িঘেরের জন্য বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। প্যারাবন দখল ও গাছ কাটার ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে। কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে চিংড়িঘেরের বাঁধও কেটে দেওয়া হয়েছে। 

বন বিভাগের মহেশখালীর গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম আনিসুর রহমান বলেন, চিংড়িঘেরের বাঁধ করতে গিয়ে প্যারাবনের ছোট-বড় প্রায় আট হাজার বাইনগাছ কাটা পড়ায় বন বিভাগের প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভূমিদস্যুরা প্রথমে শ্রমিক দিয়ে প্যারাবন নিধন করে। পরে খননযন্ত্র দিয়ে ওই সরকারি বনভূমি দখল করে অবৈধভাবে চিংড়িঘেরের বাঁধ তৈরি করেছে। একাধিকবার বাঁধ কাটার পর পুনরায় বাঁধ নির্মাণ করায় বন বিভাগের পাঁচ সদস্যের একটি টহল দল সেখানে নিয়োজিত রাখা হয়েছে।