বছরজুড়ে এই সময়ের অপেক্ষায় থাকেন সুলতানা আক্তার। পেশাগত ব্যস্ততার কারণে গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয় না চট্টগ্রাম নগরের একটি পোশাক কারখানার এই কর্মীর। ঈদের সময় একটু লম্বা ছুটি পান। তখন বাড়ি যাওয়ার সুযোগ মেলে চাঁদপুরের শাহরাস্তির এই বাসিন্দার। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের আনন্দকে রঙিন করতে মায়ের জন্য নিয়েছেন শাড়ি, বাবার জন্য পাঞ্জাবি। নিজের জন্য করেছেন টুকটাক কেনাকাটা।
সুলতানা আক্তারের মতো ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন লোকজন। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ মিলিয়ে টানা পাঁচ দিনের ছুটি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, শেষ কর্মদিবস হওয়ায় আজ ছিল সবচেয়ে বেশি ভিড়। যাত্রীদের মধ্যে যাঁরা অনলাইনে আগে থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি, তাঁরা স্টেশন থেকে ‘স্ট্যান্ডিং টিকিট’ (দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট) কিনেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আজ দুপুরের পর থেকে বাড়িমুখী মানুষের জমায়েত বাড়তে থাকে। যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগে ছিল বেশ কড়াকড়ি। টিকিট ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেননি রেলওয়ের কর্মীরা।
শেষ কর্মদিবসে ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকলেও প্রায় সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা। তবে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস আগের দিনের মতো আজও প্রায় ৫ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে।
বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শত শত মানুষ। অপেক্ষায় ছিলেন ট্রেনের জন্য। প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসতেই নির্ধারিত বগি খুঁজে নিজের আসন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন লোকজন। পরিবারের সদস্যদের আসনে বসাতে তৎপর ছিলেন যাত্রীরা। এর মধ্যে ভিড়ের কারণে অনেককে নিজের আসন খুঁজে পেতে গলদঘর্ম হতে হয়। গরমের কারণে যাত্রীদের বেগ পেতে হয়েছে। হাতপাখা সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন অনেকে। আবার কেউ কেউ নিয়ে আসেন ছোট আকারের চার্জার ফ্যান। দাঁড়িয়ে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যাও ছিল অনেক।
চাঁদপুর বিশেষ ট্রেনের যাত্রী রিমন হোসেন বলেন, বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেননি তিনি। আবার বাসে যাওয়া অনেক ঝক্কিঝামেলার। তাই তিনি স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে বাড়ি যাচ্ছেন।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮টি ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও স্পেশাল, সুবর্ণ, চট্টলা, পাহাড়িকা, সাগরিকা, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও চাঁদপুরগামী স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে গেছে। সব ট্রেন ঠিক সময়ে স্টেশন ছেড়ে যেতে পারলেও ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস দেরিতে পৌঁছায় ছাড়তে সাড়ে চার ঘণ্টা দেরি করেছে। আর বিকেলে সময়মতো ছেড়ে যায় মহানগর গোধূলি, চাঁদপুর বিশেষ ট্রেন, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ও মেঘনা এক্সপ্রেস।
আজ বিকেলে স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে যাত্রীদের ভিড় ছিল বেশি। কাল বুধবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হবে। তাই অফিস শেষ করে লোকজন বাড়িমুখী হয়েছেন। বিজয় ছাড়া প্রায় সব কটি ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে।